রবিবার, ২৭ মে, ২০১২

।। কাছে আসা... ভালোবাসা ।।


লিখেছেন-পুতুল হক



জীবনে ভালোবাসার অনেক গল্প, উপন্যাস পড়লেও নিজের জীবনে এমনি করে নিজেরই অজান্তে ভালোবাসা এসে বাসা বাঁধবে কখনো ভাবতেও পারিনি।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে অনেক আনন্দে দিন কাটতে লাগলো। সবই নতুন মুখ।আমার কোনো পুরোনো বন্ধুই এখানে আমার সাথে নেই।শুরুতেই একটা গ্রুপ করা প্রয়োজন হলো পড়াশোনার জন্য।একদিন আমি আর আমার এক নতুন বান্ধবী ক্লাস থেকে বের হয়ে নিচে নামতেই ক্লাসেরই দুটি ছেলের সামনে পরলাম। তারাও গ্রুপ করার ব্যাপারে কথা বলতে চায়।এদের আগে কখনো খেয়াল করিনি।আজই প্রথম পরিচয়। নাম জানার পালা শেষ হলো, পরিচয় হলো সেই মানুষটির সাথে যাকে আজ আমি অনেক ভালবাসি,জয় ।আমার বান্ধবীটি আর জয়ের পাশে দাড়ানো তার বন্ধুটিই কথা বলছিল বেশি। মুখোমুখি দাড়িয়ে আমরা দুজন...কথা শুনছিলাম আর মাঝে মাঝে চোখ তুলে একজন আরেকজন কে দেখছিলাম।


একটা অ্যাসাইনমেন্টের প্রয়োজনে প্রথম যেদিন জয় আমাকে ফোন দিল সেদিন ২ মিনিটের বেশি কথা হয়নি। কিন্তু মনের মাঝে একটা ভালোলাগা তৈরি হতে লাগলো।ক্লাসে ওর সাথে আমি কথাই বলতে পারতাম না। কেমন একটা লজ্জা ঘিরে ধরতো আমাকে।ওর চোখে চোখ পড়লে চোখ নামিয়ে নিতে হতো।মনে হতো ওই চোখে কি যেন আছে...আমাকে কি যেন বলতে চায়।বন্ধুদের ছাড়া একা ওর সাথে কথা বলার সাহস তখনো হয়নি। সবাই একসাথে থাকলে কথা বলতে পারতাম, ঝগড়া করতাম আর একজন আরেকজন কে পচাতাম।ধীরে ধীরে শুরু হলো রাত জেগে কথা বলা।প্রথম দিকে আমি ওর ফোনের জন্য অপেক্ষা করতাম, আমি ফোন করলে জয় সেটা কিভাবে নেয় তা ভেবেই ফোন করা হতোনা। ও আমাকে ফোন করতো আর আমরা দুজন হারিয়ে যেতাম এক অজানা দেশে।অনেক সুন্দর সুন্দর কথা বলতো জয়।হাজার হাজার নাম দিত আমার আর সেইসব নামে ডাকতো। পৃথিবীর যত ভালোলাগা এসে ভর করতো আমাদের দুজনকে।এ এক অন্য রকম ভালোলাগা, যেখানে কোন চাওয়া পাওয়া নেই। অনেক ইচ্ছে হত ওর সাথে ক্লাসের ফাকে কিছুটা সময় কাটাই কিন্তু তখনো হয়ে ওঠেনি।


দেখতে দেখতে প্রায় ৭/৮ মাস কেটে গেল। ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাওয়ার আগে একদিন রাতে জয় আমাকে বললো ও আমার সাথে দেখা করতে চায়।আর আমিও রাজি হয়ে গেলাম। সেদিন ছিল ১৪ সেপ্টেম্বর। সকাল ১০ টায় আমাদের দেখা করার কথা কিন্তু ওর কিছু কাজ ছিল বলে আসতে একটু দেরি হয়েছিল।আমি ওর বন্ধু নাকি অন্য কিছু সেই প্রশ্ন সেদিন মাথায় আসেনি। আমি শুধু প্রতিটি মুহুর্ত হৃদয় দিয়ে অনুভব করছিলাম।ওর পাশে বসে বৃষ্টি দেখার ইচ্ছে আমার অনেক দিনের...আর হঠাৎ সেদিন আমার সেই সুযোগটাও হয়ে গিয়েছিল।বৃষ্টি দেখা, গল্প করা আর একজন আরেকজনের হাতে আঁকাআকি করে কখন যে বিকেল হয়ে গেছে টেরই পাইনি।ততদিনে জয় আমার বাসার কাছাকাছি একটা বাসা ভাড়া নিয়েছে। তাই সেদিন একসাথে রিকশা করে বাসায় ফিরলাম দুজনে।কিন্তু মনটা খুবই খারাপ হল...কালই জয় গ্রামের বাড়ি চলে যাবে। ভালোলাগার মুহুর্তগুলো এত তাড়াতাড়ি কেন শেষ হয়ে যায়? সেই ঈদটা আমাদের খুবই ভাল কাটলো।সারাক্ষণ আমরা ফোনে কথা বলেছি আর ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করেছি।এতদিন আমরা 'তুই' সম্বোধনে কথা বলতাম।কিন্তু একসময় বুঝতে পারলাম মনের অজান্তে আমরা 'তুমি' তে চলে এসেছি।আমি জয়কে যখন প্রশ্ন করলাম আমরা কেন 'তুমি' করে বলছি তখন ও মন খারাপ করে বললো তোমার খারাপ লাগলে বলতে হবেনা।সেই থেকে আজ পর্যন্ত আমি জয়কে তুমি সম্বোধন করছি।


ছুটির পরে প্রথম দিন ক্লাস শেষ করে দুজনে একসাথে বাসায় ফিরলাম।বাসায় ঢুকতেই জয় আমাকে ফোন দিয়ে বললো বের হতে। প্রথমে না করলেও শেষ পর্যন্ত রাজি হয়ে গেলাম।সেইদিন প্রথম আমরা ধানমন্ডি লেকে গেলাম, দুজনে বোটে করে বেশ খানিকটা সময় কাটালাম।একটা খাবারের দোকানে ঢুকলাম কিন্তু ওর একটাই কথা খাইয়ে দিতে হবে নইলে খাবেনা। কি আর করা একটুখানি মুখে তুলে দিলাম।এরপর প্রায়ই আমরা ক্লাস শেষে কখনো লেকে, কখনো বসুন্ধরায় কখনো অন্য কোথাও ঘুরতে যেতাম. এভাবেই কেটে যেতে লাগলো দিন।কিন্তু নিজের আবেগ কখোনই জয়ের কাছে প্রকাশ করতে চাইতাম না।ওর সব প্রশ্নের একটাই উত্তর ছিল আমার কাছে...আমি ওর খুব ভালো বন্ধু যে সব সময় ওর পাশে থাকবে। তবুও আস্তে আস্তে এ কোন মায়ার বাঁধনে জড়াতে লাগলাম নিজেও জানিনা।বৃষ্টির দিনে রিকশায় করে দুজনে ভিজতে ভিজতে চলে যেতাম লেকে, রংধনু আর প্রজাপতির রঙ্গিন পাখার রং দিয়ে রাঙ্গাতে লাগলাম জীবন।কথা, গান আর কত মান অভিমানে বাঁধা পরতে লাগলাম আমরা। আমার ওপরে জয়ের অধিকার তাই দিন দিন বেড়েই চলেছে। বন্ধুত্ব কি তবে ভালোবাসায় রূপ নিচ্ছে? কিন্তু জয়ের এই ভালবাসার ডাকে আমি সাড়াও দিতে পারছিলাম না।


অন্য সবার মত স্বাভাবিক জীবন আমার নয়। আমি একটু অসুস্থ্য...থ্যালাসিমিয়া আছে আমার..এক কথায় জটিল অসুখ। সেই কথা অবশ্য এতদিনে জয় কে বলা হয়ে গেছে। তাই একথা ও আর শুনতে রাজি নয়। এতদিন আমি যে স্বপ্নরাজ্যে ভেসে বেড়াচ্ছিলাম তার থেকে বাস্তব জীবন অনেক কঠিন। কিন্তু জয়কে আমি কিছুতেই সে কথা বোঝাতে পারিনা।ওর কথা ভেবেই ওর কাছ থেকে দূরে যেতেও পারিনা।ভালোবাসার সাথে সাথে একে অপরের প্রতি যে দায়িত্ব, কর্তব্য আর চাওয়া-পাওয়া জন্মে তা কি আমি ঠিকমত পালন করতে পারব কিনা সেই ভয় মনে উঁকি দিতে লাগলো।ছোটোবেলা থেকে আব্বু আম্মু কে আমার জন্য যে কষ্ট করতে দেখেছি, আর কাউকে নতুন করে সেই কষ্টের ভাগীদার করতে চাইনি।তাই ওর কাছ থেকে দূরে সরে আসার চেষ্টা করলাম। যেখানে নিজের জীবনের কোন নিশ্চয়তা নেই সেখানে অন্য একজনকে আমি ভালোবাসার নিশ্চয়তা কিভাবে দিব? কিন্তু যখনি মনে হয় জয় আমাকে ছাড়া কিভাবে থাকবে, কে ওর সব কিছুর খেয়াল রাখবে তখন আর নিজেকে সামলে রাখতে পারিনা।কারন আমি জানি ও আমাকে প্রচন্ড ভালবাসে। 


একদিন জয় আমাকে বললো ওর সাথে দেখা করতে।সেদিন কথা বলার এক পর্যায়ে জয় জানতে চাইলো আমি ওকে ভালোবাসি কিনা।নিজের সব অপুর্নতা, সব ভয় ভুলে গিয়ে মাথা নেড়ে সায় দিলাম।তখন জয় বললো তাহলে বলো তুমি আমাকে ভালবাসো। ততক্ষণে মনে মনে হাজার বার এ কথা বলা হয়ে গেছে।মুখেও বলতে হলো। সেদিন ছিল ৭ই ফেব্রুয়ারী। সে বছর প্রকৃ্তির সাথে সাথে আমার জীবনেও ফাগুন এলো। নিজেকে নতুন করে আবিষ্কার করলাম, নতুন রূপে চিনতে শিখলাম। যে মানুষটি আমার সাদাকালো জীবন কে রঙ্গিন করে দিল তার সাথে নিজেকে জড়িয়ে নিলাম সারাজীবনের জন্য।


কিন্তু নিয়তি আর কাকে বলে? ভালবাসার যে সূর্য এসে মনের আকাশ টা আলোকিত করে দিল তার পরশ গায়ে মাখতে না মাখতেই বিরহের মেঘ এসে তা ঢেকে দিল। আমার আব্বু বেশ কয়েক বছর হলো দেশের বাইরে থাকে।তার চেষ্টাতেই আমার আর আম্মুর ভিসা হয়ে গেল।আমার কোন ভাই-বোন না থাকায় আর আমি শারীরিকভাবে অসুস্থ্য বলেই আমাকেও আম্মুর সাথে পাড়ি জমাতে হলো সুদুর প্রবাসে।অনেক দূরে রেখে এলাম আমার সেই প্রিয় মানুষটিকে।তাড়াতাড়ি ফিরে আসব...শুধু এতটুকুই বলতে পেরেছি্লাম তাকে।বছর পার হতে লাগলো কিন্তু এতদিনে আমাদের ভালোবাসা একটুও কমেনি বরং আমরা আরো গভীরভাবে ভালোবাসতে শিখেছি পরস্পরকে।নিজেদের কাজের ফাঁকে যখন কথা হতো তখন ভালোবাসার সেই উষ্ণ পরশ আমরা খুঁজে পেতাম।আমরা শুধু অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করেছি সেই দিনটির জন্য যেদিন আমরা আবার একসাথে বৃষ্টিতে ভিজতে পারব, রংধনু দেখব। রিকশা করে গন্তব্যহীন ঘুরে বেড়াব।হাত ধরে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থাকব আর গল্প করব।অপেক্ষা আর স্বপ্নের জাল বোনা।আমার অসুস্থতার জন্য ওর পরিবার আমাকে মেনে নিতে চাচ্ছিলো না। এট নিয়ে প্রথম দিকে একটু ঝামেলা হয়। দীর্ঘ ৩ বছর পর আমি বাংলাদেশে যাই এবং সেখানেই দুই পরিবারের সম্মতিতে আমাদের বিয়ে হয়।বিয়ের পর আমরা দুজনেই এখন প্রবাসী।


ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে আমার সুখের সংসার সাজিয়েছি, এর চেয়ে বেশি আনন্দের আর কি হতে পারে। একটু একটু করে নিজেদের গুছিয়ে নিচ্ছি অনাগত নতুন মানুষটির জন্য।মাঝে মাঝে মনে হয় এই সুখের জন্ম যেন এই পৃথিবীতে নয়, যেন অন্য কোন ভূবনে

যদি কেউ তোমাকে ছেড়ে যেতে চায় তবে তাকে যেতে দাও।তোমার নিয়তি কখনোই তার সাথে বাঁধা নয়
যে তোমাকে ছেড়ে চলে যায়।
কারো চলে যাওয়ার অর্থ এই নয় যে তোমার জীবনের এখানেই
সমাপ্তি, তোমার গল্পে তাদের অংশের সমাপ্তি ঘটেছে মাত্র।
আর কারো জন্য তোমার গল্পটা কখনোই থেমে থাকবে না।। —

বুধবার, ১৬ মে, ২০১২

প্রিয় মানুষটিকে দেওয়ার জন্য সবচেয়ে ভালো উপহার কি জানেন? সেটা হল ``সময়``
এই উপহারের অর্থ হচ্ছে, আপনি সেই মানুষটিকে নিজের জীবনের একটা অংশ দিয়ে দিলেন যা আর কখনো ফেরত নেওয়া কিংবা ফেরত দেওয়া সম্ভব না । এর চেয়ে সুন্দর উপহার কি আর কিছু হতে পারে ♥ !

মঙ্গলবার, ১৫ মে, ২০১২

"আমি মানুষকে ভালবাসতে না বলে যুদ্ধ করতে বলি কারণ যুদ্ধে হয় আপনি বাঁচবেন না হয় মরবেন।

কিন্তু ভালবাসাতে
না পারবেন বাচতে; না মরতে।" ~ এডলফ হিটলার।