মঙ্গলবার, ৩১ জানুয়ারী, ২০১২

গল্প


কি বলব? কিছুই না..........
"
আরি !মেয়েটা নিজের প্রফাইল পিকচার দিছে !
ওয়াও !"
কমেন্ট করলাম
"NICE"
৫ মিনিট পর দেখলাম notification আসছে একটা . . চেক করলাম
মেয়েটা কমেন্ট করেছে
"thanks"
একটা স্মাইল সিমবোল দিয়ে দিলাম
মেসেজ দিলাম
বললাম "ফাটাফাটি একটা ছবি দিছো ।"
রিপ্লাই সাথে সাথেই এল
"
হুম আর পাম দেয়া লাগবে না"
খুব মজা পেলাম
এভাবেই ১0-১৫ দিন ফেসবুক এ মেসেজ আদান প্রদান চলল
একদিন হটাত্‍ ওর নাম্বার টা চাইলাম
সে জানতে চাইলো "কেন নাম্বার কেন !"
বল্লাম "তোমাকে ডিস্টার্ব করব তাই"
সে হেসে দিল
নাম্বার দিল
প্রথমবার এর মত কখা শুনলাম তার
অবাক হয়ে গেলাম এত সুন্দর কন্ঠ !
আমি খুব ফান করতাম তার সাখে
আর সে শুধু হাসতো
ও হাসার সময় শুধু ওর হাসি টাই শুনতাম
এত সুন্দর করে যে কোন মানুষ হাসতে পারে জানা ছিল না
আমাদের মধ্যে সারাদিন মেসেজ চ্যাটিং হত
ও খুব বৃষ্টি পছন্দ করতো
আর আমি !
ওকে বলতাম . . .
"
বৃষ্টি আবার কারো পছন্দ হয় নাকি !"
ও ঐ দিন খুব এক চোট হাসল
ওর কথাতেই জীবনে প্রথম বার এর মত নিজের ইচ্ছায় বৃষ্টিতে ভিজলাম
অদ্ভুত অনূভূতি হল
ওকে ওই দিন ফোন করে বললাম "জানো ? আজকে বৃষ্টিতে ভিজছি ।"
সে তো হাসতে হাসতে অবস্থাই খারাপ করে ফেলল
ওই দিন বলেই ফেললাম "হাসলে তোমাকে খুব সুন্দর লাগে"
সে বলল "এই তুমি আমারে দেখছো ? না দেখে কিভাবে বললা ?"
আমি বললাম "আমার মনের মাঝে তোমার একটা ছবি আকা আছে ।"
সে আবার ও হাসতে থাকল
আর আমি মুগ্ধ হয়ে শুনলাম
কতো যে কষ্টের রাত ওর সাথে কথা বলে কাটিয়েছি !
কষ্টে থাকলেই ওর সাথে কথা বলতাম কথা বলা শেষে অবাক হয়ে দেখতাম মন ভাল হয়ে গেছে

২.

২ দিন হল সে ফোন দেয় না মেসেজ ও দেয় না
অস্থির লাগতেছে
ও অবশ্য বলছিল যে ও সিম টা চেন্জ করবে কারন তাকে অনেকে ডিসটার্ব করে
তাই বলে ৪৮ ঘন্টা !
ভীষন অভিমান হল
সন্ধায় তার ফোন আসলো
সব রাগ অভিমান তার উপর একসাথে প্রয়োগ করলাম
সে কষ্ট পেল
তার চেয়ে বেশি কষ্ট পেলাম আমি
তাকে সরি বললাম ওই দিন আর সে কথা বলল না ভীষন কষ্ট হল
৩.
ছোটবেলা থেকেই আমার মাথা ব্যথা ইদানিং ওটা বেড়েছে
অনেক মাথা ব্যথা করলে একসময় নাক মুখ দিয়ে ব্লিডিং হয় অনেক ডাক্তার
দেখাইছি কিন্তু সবাই বলে প্রবলেমটা মাথা ব্যাথা থেকেই হয়
একদিন খবর পেলাম অস্ট্রেলিয়া থেকে একজন ডাক্তার এসেছেন ওনাকে দেখাতে ঢাকা
গেলাম ওর সাথে এই কারনে ২-৩ দিন কথা হল না
আমার খুব কষ্ট হচ্ছিল
ডাক্তার আমাকে বলল যে উনি অস্ট্রেলিয়া থেকে আবার কয়েকমাস পর আসবেন তখন
তিনি আমার টেস্টের রেজাল্ট গুলো দিবেন ডাক্তার আমার মাথা থেকে বুক
পর্যন্ত সিটিস্ক্যান করিয়ে রিপোর্ট টা নিজের সাথে নিয়ে গেল
এত ঝামেলার জন্য ওর সাথে কথা বলতে পারি নি
এর আগে কখনো মনে হয়নি কিন্তু ওই দিন মনে হয়ছিল যে ওকে আমি অনেক অনেক ভালবাসি

৩.

রাতে ওকে ফোন দিলাম
ভেবেছিলাম ও রেগে যাবে অবাক হয়ে গেলাম যখন ও বললো "কই ছিলা ? আমার কথা
কি মনে পরে নাই ? কি হইছে তোমার ?"
আমি ওকে আসল কথাটা বলতে চাই নি আমি জানি না কিভাবে যেন সে বুঝে ফেলল
আমি মিথ্যা বলতেছি
শেষ পর্যন্ত বলতেই হল
কথাটা সে হয়তো ভুলে গেল কিন্তু আমার এই প্রবলেমটা বাড়তেই থাকল
আমি খেলতে খুব পছন্দ করি সেটা ও জানে কিন্তু খেলার সময় আমি ব্যথা
পেতাম আর ও কিভাবে জানি বুঝে ফেলত
কয়েকদিন খুব বকা দিত কিন্তু যখন বুঝল আমাকে থামাতে পারবে না তখন শুধু
বলল "প্লীজ লক্ষী একটু দেখে খেইলো ।"
আমি ওর এধরনের কথা শুনে খুব হাসতাম
ওর সাথে খুব মজা করতাম
আর ও আমাকে একটা মোহের মধ্যে রাখত

৪.

একদিন রাতে সাহস করে বলেই ফেললাম মনের কথা মেসেজে বলেছিলাম কারন কল করে বলার মত সাহস ছিল না অনেকক্ষন পর একটা মেসেজ আসল যেটার মূল কথাটা ছিল যে সে আমাকে ভাল একজন ফ্রেন্ড হিসেবে পেতে চায় ওই দিন খুব কষ্ট হইছিল
বুঝ হবার পর ওই দিন ই প্রথম চোখ দিয়ে অঝোর ধারায় পানি পরেছিলো
কয়েকদিন কথা বলিনি ওর সাথে ও প্রতিদিন ই কল করতো আমাকে সিদ্ধান্ত নিলাম
সে আমাকে যেভাবেই চায় সেভাবেই থাকবো ওর জন্য ভালবাসাটুকু আমার বুকেই
জমা থাকুক
আবার আগের মত হয়ে গেলাম
আমার সাথে পরিচিত হওয়ার আগে ওর অনেক ফ্রেন্ড ছিল
কিন্তু আস্তে আস্তে ওর ফ্রেন্ড এর সংখ্যা কমতে থাকল ও আমার সাথেই সব
শেয়ার করতো আমি নিজেকে আস্তে আস্তে গুটিয়ে নিতে থাকলাম কারন যখন সে
আর একটা ছেলের সাথে এভাবেই কথা বলবে তখন আর আমাকে মনে থাকবে না তাই
নিজের কষ্ট গুলো নিজের ভিতরেই লুকিয়ে রাখতাম

৫.

রোজা এসে গেল
অস্ট্রেলিয়া থেকে ডাক্তার এল আমি একাই ডাক্তার এর সাথে দেখা করতে গেলাম
ডাক্তার আমাকে রিপোর্ট গুলো দেখাতে চাইলো না প্রথমে
পরে অনেক চাপাচাপির পর আমার হাতে দিল রিপোর্ট টা পরলাম ওখানে লেখা
ছিল কোন এক অজ্ঞাত কারনে আমার ঘাড়ের কাছে দুটো রগ জরিয়ে গেছে একটা
আরেকটার সাথে

অপারেশন প্রয়োজন কিন্তু অপারেশন টা খুব রিস্কি বাচার সম্ভাবনা ৫০-৫০আর অপারেশন টা না করলে আমার জীবন আর বড়জোড় ৫ বছর  মন ভেঙ্গে গেল
আব্বা আম্মা কে জানাতে পারলাম না আব্বা আম্মা এখনো জানেন নাহ আমার
চাচা যেহেতু ডাক্তার শুধু ওনি আর আমার কিছু কাছের বন্ধু কে জানালাম বিষয়টা

এত রাগ লাগতেছিলো ! ভেবেছিলাম ভাল কোন জায়গায় টিকার পর আমার স্বপ্নের মানুষ
টাকে নিজের করে নিবো তখন সে আর মানা করতে পারবে না কিন্তু আমার স্বপ্ন
শুরুর আগেই শেষ হয়ে গেল  রাগে দুঃখে মোবাইল , সিম সব ভেঙ্গে ফেললাম ওর সাথে যোগাযোগ বন্ধ  কিন্তু ঈদের কিছুদিন আগে আর থাকতে পারলাম না নতুন একটা সিম থেকে কল দিলাম সে ফোন ধরে অনেক কথাই বললো  বললো আমি নাকি ওর সাথে আর কনটাক্ট রাখতে চাই না  আর সামলাতে পারলাম না কি হলো কিছুই বুঝলাম না
ওকে গড়গড় করে সব বলে দিলাম কিন্তু সে ভাবল হয়তো আমি মজা করতেছি
আমার পক্ষে সিমটা ২৪ ঘন্টা খোলা রাখা সম্ভব না আমি সিম টা খুলি শুধু ওর
কথা ওর হাসি শোনার জন্য ওটা দিয়ে শুধু ওকেই ফোন করি আমি
আজকে সকালে ফোন দিলাম অনেকবার ও ধরলো না
আমি জানি ও প্রবলেম ছাড়া সবসময় ই ফোন রিসিভ করে কিন্তু আজকে আমার কি হল
বুঝলাম না অনেক উল্টা পাল্টা কথা বলে ফেললাম ওকে মেসেজ দিয়ে বললাম
"
আমাকে ভুলেই গেলা ? অবশ্য আর তো মাত্র কয়েকদিন"
মেসেজটা সেন্ড করে ফোন অফ করে দিলাম
বিকালের দিকে খুব খারাপ লাগা শুরু করলো
মনে হল ওর সাথে কথা বললে হয়তো ভাল লাগবে
ফোন দিলাম ধরলো না বুঝলাম রাগ করছে আমার সাথে সন্ধায় ওকে মেসেজ দিয়ে
বললাম "আমার খুব খারাপ লাগতেছে তোমার সাথে কথা বলার ইচ্ছা ছিল"
মেসেজ সেন্ড হল নাকি হল না দেখার টাইম পেলাম না এর আগেই শুরু হল
ব্লিডিং তারপর আর কিছু মনে নেই  সেন্স আসল চাচা আমার পাশে বসা আম্মা আব্বা বাড়িতে গেছে একটু পর চাচা চলে গেল আমার ছোট ভাই আসল একটু পর এসে ফোন টা দিয়ে বলল আমার ফোন 
আমি তখন ও পুরোপুরি ঠিক না ও যে কল দিছে বুঝতে টাইম লাগল  ও জানতে চাইল যে আমার কি হইছে  বললাম কিছু না ও কেদে ফেলল অবাক হলাম ওর কান্না কখনো শুনি নি ধক করে উঠলো বুক টা অনেক কষ্টে ওকে শান্ত করে ফোন কাটলাম
কারেন্ট চলে গেল অন্ধকারে শুয়ে শুয়ে ভাবতে থাকলাম "কেন কাদল সে ? তাহলে
কি সে আমাকে পছন্দ করে ?
নাকি শুধুই Sympathi ?"
যাই হোক অনেক দেরি হয়ে গেছে
গান শুনতেছিলাম একটা . . .
গানের কথাগুলো আমার মনের কথার সাথে মিলে গেল . .
"
হাসতে গেলে এখন আমার চোখে আসে পানি ,
কখন জানি হটাত্‍ আবার চোখের রক্ত ঝরে ,
সৃষ্টি হবে অন্য রকম একটি গল্প আজ ,
আলোর নিচে সাজবো আমি অন্ধকারের সাজ
দেখো আবার আসে না যেন তোমার চোখে পানি ,
হটাত্‍ করে দেখবে তুমি হারিয়ে গেছি আমি ।"
(
আমার হাতে সময় আসলেই খুব কম তার পর ও আমি বাচতে চাই জানি না সে
আমাকে ভালবাসে কিনা কিন্তু আমি তার স্মৃতি নিয়েই থাকতে চাই । ) [সংগৃহীত]