আকাশের অনেক দিন থেকে মন ভাল নেই।
আকাশ ঠিক করল আজকে মিলি যতই সুযোগ না দিক ওকে বলবেই 'তোকে ভালবাসি মিলি'। মিলিটা কেমন জানি! সবকিছু বুঝে আবার বুঝতে দেয় না। সবকিছু জানে আবার জানায় না। কি একটা গোলক ধাঁধাঁর মধ্যে দিয়ে দিন কাটায় আকাশ।
সেই প্রথম বর্ষ থেকে একসাথে চলে।
পরিচয়ের পালাটা অন্য সব মানুষের ঘটনার মতোই। আকাশ ক্লাসে খুব চুপচাপ। আর মিলি ঠিক তার উলটো। ক্লাসটা সবসময় গরম করে রাখে। হাসি দেখলে মনে হয় কি মজার কান্ড ঘটে যাচ্ছে। আসলে কিছুই না। এমনিতেই হাসে। আকাশকে ক্লাসে তেমন কেউ চেনে না। সেদিন পিকনিক নিয়ে কথা হচ্ছিল আমতলায় বসে। ঠিক কথা নয়। আসলে হচ্ছিল ঝগড়া। কেউ প্লেস পছন্দ করতে পারছিল না।
আকাশ এগিয়ে গেলো। এই প্রথম সাবার সামনে। আমার মনে হয় কুমিল্লা যেতে পারি আমরা। ঢাকা থেকে কাছে, দিনে দিনে খুব সহজেই যাওয়া-আসা করা যাবে, ঝামেলা কম, স্থানের ঐতিহ্য তো আছেই, কোটবাড়ি নতুন করে সাজানো হয়েছে, শালবনের কথা না হয় নাই বললাম। ছোট ছোট টিলা যে কারো ভাল লাগবে।
কুমিল্লা আমার পছন্দ নয়—আকাশের কথা শেষ হবার আগেই মিলির হম্বিতম্বি। কুমিল্লা ঢাকা থেকে বেশি কাছে আর আমাদের অনেকেই হয়তঃ গেছি এর মাঝে।
কিন্তু সবাই মিলে আবার গেলে খারাপ লাগার কোন কারন নেই-বলল আকাশ। আর সবচেয়ে বড় কথা তোমার ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ এখানে আসছে কেন? আমরা এভাবে সবাই ব্যক্তিগত পছন্দের কথা বলতে শুরু করলে কোথাও যাওয়া হবে না আসলে। সুতরাং তোমার চুপ থাকাই ভাল। তুমি রাজি নও এটা জানলাম।
মিলি আহত হল আকাশের কথায়। আকাশ তুমি আমাকে আক্রমন করে কথা বলছ। এটা কিন্তু ঠিক নয়।
আমি মোটেই তোমাকে আক্রমন করছি না। তুমি নিজের গায়ে নিও না। সর্বক্ষেত্রে মাতব্বরীও ভাল নয়।
মিলি ক্ষেপে গেল। তুমি এভাবে বলছ কেন? একটা হট্টগোল লেগে গেলো। সিদ্ধান্তে আসা গেল না সেদিন। সেদিনের মতো সভা সমাপ্ত হল।
তারপর থেকে আকাশ আবার নীরব। আগের মতোই চুপচাপ। কিছুদিন পর ওরা একসাথে কুমিল্লাতেই পিকনিক করতে গেল। সেদিন মিলি শাড়ী পড়েছিল। শাড়ীতে এম্নিতেই মেয়েদের ভাল লাগে। মিলিকে লাগছিলও বেশ। আকাশের সামনে পড়েছিল-আকাশ কিছু বলেনি। যেভাবে রাগত চোখে তাকায় বলার সুযোগ নেই। তাও পাশ দিয়ে যাবার সময় আকাশ বলেছিল-রাগ করলে মানুষকে যে ভাল লাগে এটা আজকে বুঝতে পারলাম আর সাথে যদি শাড়ী পরা হয় তাহলেতো কথাই নেই।
মিলি ফিক করে হেসে দিল। সুন্দর বললে এমন কোন মেয়ে নেই যে পছন্দ করে না। অই ছেমড়া কাছে আয়-দেখলেতো মনে হয় ভাজা মাছ উলটে খেতে জানিস না-আসলে মোটেও তা নস তুই। সেদিন ওরা তুইতে নেমে গেছিল। তারপর থেকে ওরা ভাল বন্ধু। এখন আর বন্ধুত্বে নেই- বলা হয়নি আর কি।
তাই আকাশের আজ মন ভাল নেই।
বিকেল বেলা ওরা গেছে বইমেলায়। মিলি সামান্য সেজেছে। ওকে সামান্যতেই বেশী ভাল লাগে। আজকে পটপট করে কথা বলেই যাচ্ছে। কথা থামে না। আকাশ সুযোগ পায় না বলার। ভিতরে ভিতরে অপেক্ষা কখন বলবে। বইমেলা ঘোরা হল। সন্ধ্যা নেমে এসেছে। কয়েকটা বই কিনে ওরা রিক্সা করে ফিরছে।
২জনেই চুপচাপ। মিলি বলল-কিছু বল আকাশ? এভাবে চুপ মেরে আছিস কেন?
আকাশ কিছু বলতে পারল না।
সন্ধায় বাইরেটা সামান্য অন্ধকার। লিরলিরে বাতাস ওদের গায়ে লাগছে। আচ্ছা বোকা ছেলে তুই এমন কেন বলতো-মিলি বলে। তুই না প্রথম দিন আমার সাথে ঝগড়া করেছিলি। তুইতো আর ১০জনের মতো হাবলু না। জানিস না ভালবাসার কথা ছেলেদের আগে বলতে হয়। মেয়েরা শুনতে পছন্দ করে আর বলবে পরে। আমি একটা মেয়ে হয়ে কেমন করে আগে বলি বল। তুই না একটা গাঁধা।
আকাশ কি বলবে বুঝে উঠতে পারল না। মিলির হাতটা নিজের করে নিয়ে নিল। সবসময়তো কথা বলে উত্তর দিতে হয় না।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন