রবিবার, ২২ জানুয়ারী, ২০১২

চিঠি


চিঠি
by
হারিয়ে যাওয়া নাফিস
ক্লাস ঢুকেই মিথিলার মেজাজটা খারাপ হয়ে গেল। কারন তখনো কেউই এসে পৌঁছায়নি। শুধুমাত্র রাতুল পিছনের টেবিলটাতে একা বসে আছে। এই ছেলেটাকে মিথিলা একদমই পছন্দ করে না ক্লাসের সবচেয়ে অমনোযোগী , বাজে ছাত্র হিসেবেই রাতুল পরিচিত আর দেখতেও কেমন জানি অগোছালো। মাথার চুলগুলো উসকো-খুসকো পরনের কাপড় গুলোও অপরিষ্কার মিথিলাকে দেখলেই ছেলেটা কেমন জানি হা করে তাকিয়ে থাকে এই কারনে ছেলেটাকে মিথিলার আরও বেশি অপছন্দ

বিকেলবেলা মিথিলা তার বান্ধবী লগ্নের সাথে কথা বলার এক পর্যায়ে জানতে পারলো যে তাদের ক্লাসের রাতুল , সুজয়ের কাছে মার খেয়ে মাথা ফাটিয়ে ফেলেছে
মিথিলা , সুজয়কে খুব ভাল করেই চেনে আগে প্রায়ই রাস্তায় মিথিলাকে বিরক্ত করতো
বখাটে ছেলেরা তো মারামারি করবেই , এটাই তো স্বাভাবিক তাই , রাতুলের মাথা ফাটানোর ব্যাপারটা মিথিলার মনে একটুও ছেদ ফেলল না

মিথিলা মন খারাপ করে কলেজের বারান্দায় দাড়িয়ে আছে আজকে ওর পরীক্ষাটা খুবই খারাপ হয়েছে পাশ করতে পারবে বলে মনে হয় না এত চিন্তার কারন ছিল না যদি এটা নির্বাচনী পরীক্ষা না হয়ে সাধারণ কোন পরীক্ষা হতো কিন্তু , নির্বাচনী পরীক্ষায় পাশ না করতে পারলে তো সে এইচ.এস.সি পরীক্ষায় অংশগ্রহন করতে পারবে না

পরের দিন কলেজে গিয়ে মিথিলা খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেল কারন, গত রাতে নাকি শর্ট-সার্কিট আগুন লেগে ওদের পরীক্ষার খাতা পুড়ে গেছে তাই গতদিনের পরীক্ষাটা আবার অনুষ্ঠিত হবে

এইচ.এস.সি পরীক্ষা শেষ হওয়ার কিছুদিন পরেই মিথিলার ক্যান্সার ধরা পড়ল ধীরে ধীরে রোগটা সারা দেহে প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করল কিন্তু , অপারেশন করতে যে পরিমাণ টাকা দরকার তা জোগাড় করাটা মিথিলার পরিবারের পক্ষে সম্ভব হচ্ছিলো না শেষ পর্যন্ত ধার-দেনা করে বিভিন্ন জায়গা থেকে টাকা সংগ্রহ করে অপারেশন করা হল
আল্লাহের রহমতে এবং সবার দোয়ায় মিথিলা সুস্থ হয়ে উঠলো

সুস্থ হওয়ার কিছুদিন পরে মিথিলার কাছে একটা চিঠি আসে

চিঠিটা ছিল এইরকম :

প্রিয় মিথিলা ,
কলেজে যে দিন তোমাকে প্রথম দেখেছি সে দিন থেকেই তোমাকে অনেক ভালবেসে ফেলেছি কিন্তু , একটা বখাটে ছেলের ভালবাসাকে তুমি কোনদিনই মেনে নেবে না তাই , ভেবেছিলাম লুকিয়ে যতটা ভালবাসা যায় ততটাই ভালবাসবো
সুজয় যে দিন লোক ভাড়া করে এনেছিল তোমাকে কিডন্যাপ করার জন্য , সে দিন ওদের সাথে মারামারি করেছিলাম শুধু তোমাকে বাঁচাবো বলে।

লগ্নের কাছে জানতে পেরেছিলাম, তোমার নির্বাচনী পরীক্ষায় রসায়ন পরীক্ষাটা খুব খারাপ হয়েছিল তাই, সে দিন রাতেই কলেজের অফিসে তালা ভেঙ্গে ঢুকে খাতা পুড়িয়ে দিয়েছিলাম শুধু তোমার মুখে একটু হাসি দেখব বলে। কিন্তু , দারোয়ানের কাছে ধরা পরে গিয়ে ছয় মাসের জেল হল। কলেজেরই ছাত্র কাজটা করেছে বলে ব্যাপারটা শর্ট-সার্কিট আগুন লেগেছে বলে চালিয়ে দেয়া হল। তাই আর এইচ.এস.সি পরীক্ষাটা দেয়া হল না।

জেল থেকে বের হয়ে শুনলাম, তুমি ক্যান্সার আক্রান্ত। টাকার অভাবে তোমার অপারেশন হচ্ছে না জেনে কোন উপায় না দেখে নিজের কিডনি বিক্রি করে টাকা সংগ্রহ করলাম শুধু তোমায় ভালবাসি বলে

আজ আমি জীবনের শেষ পর্যায় এসে উপস্থিত হয়েছি আমার অবশিষ্ট কিডনিটা অনেক আগে থেকেই নষ্ট ছিল এখন অবস্থা দিনে দিনে আরও খারাপ হচ্ছে ডাক্তার বলেছে, আর খুব বেশি দিন বাঁচবো না তাই মারা যাওয়ার আগে ভাবলাম ,সেই কথাটা বলে যাই যে কথাটা আজো তোমায় বলতে পারিনি
আমি তোমাকে ভালবাসি মিথিলা অনেক ভালবাসি

ভাল থেকো
ইতি,
তোমাদের ক্লাসের সবচেয়ে বাজে ছেলে
রাতুল

মিথিলার চোখ দিয়ে পানি পড়তে পড়তে চিঠিটা ভিজে গেল

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন