বুধবার, ২৮ ডিসেম্বর, ২০১১

‎"ছবির ফ্রেম"

"ছবির ফ্রেম"
By- Udasi Kobi (Rabbi Ahmed)

 


Part - 1


পুরনো ডায়রিটা খুলে হঠাত্‍ করেই তিথির মন খারাপ হয়ে গেল। ডায়রির মাঝে রুদ্রের একটা ছবি। বাতাস লেগে প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে। রুদ্রের স্মৃতি বলতে তিথির কাছে এটুকুই। পনের বছর আগের ছবি। অনেক কষ্টে তিথি ডায়রিতে লুকিয়ে রেখেছে। কেউ দেখে ফেললে বিপদ। বিবাহিতা স্ত্রীর কাছে স্বামী ছাড়া অন্য যে কারো ছবি থাকাটা গুরুতর অপরাধ। তিথি জানে। তারপরেও রুদ্র বলে কথা। একটা সময় ছিল যখন তিথির প্রতিটি নিশ্বাস জুড়ে ছিল রুদ্র। অনেকটা পথ হাতে হাত রেখে ওরা পাড়ি দিয়েছিল। তারপরেও নিয়তি নামের এক অদৃশ্য বস্তু আমাদের জীবনটাকে নিয়ন্ত্রন করে। আর তাই হয়তো জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই অনিশ্চিত।

তিথির জীবনে রুদ্র ছিল অতিথির মত। খুব ভালো গান গাইত বলে তিথি ছিল ক্যাম্পাসের সবার প্রিয় মুখ। ভার্সিটির কোন এক বর্ষবরনে তিথির সাথে রুদ্রের পরিচয়। বরাবরই কিছুটা ভাবুক প্রকৃতির ছিল রুদ্র। নিজে স্বপ্ন দেখতো। আর সব স্বপ্ন জুড়েই থাকতো তিথি। রুদ্র বলতোতিথি,একদিন তুমি অনেক বড় গায়িকা হবে। সাড়া দেশের মানুষ তোমাকে একনামে চিনবে। সাথে আমাকেও। আমি তোমার গীতিকার তো তাই'. . .কথাটা বলেই রুদ্র হো হো করে হাসি শুরু করতো। রুদ্রর অনেকগুলো বাজে অভ্যাসের মধ্যে এটি একটি। সব কথার শেষে হাসি। তিথি রুদ্রকে থামিয়ে দিয়ে বলতোআচ্ছা রুদ্র, যদি কোনদিন আমি হারিয়ে যাই তোমার কাছ থেকে। দূরে অনেক দূরে। সেদিনও কি তুমি এমনি করে হাসবে? ঠিক আজকের মত।' কথাটা শুনে রুদ্রর হাসির বেগ আরো বেড়ে যেত। তিথির কাঁধে হাত রেখে বলতোগান ছেড়ে ইদানিং দর্শন চর্চা হচ্ছে বুঝি? দাঁড়াও কালই আমি প্লানচেট করে প্লেটোকে আনবো।' বলবোস্যার,তিথি নামের এই মায়াবতী মেয়েটি আপনার কাছে পড়তে চায়। আপনি ওকে একটু পড়াবেন? হা হা হা।' রুদ্রর হাসি শুনে তিথির গা জ্বলত। কিছু কিছু মেয়ে আছে রাগলে আরো সুন্দর লাগে। তিথিও সে রকম। আর তাই রুদ্র মাঝেমাঝেই এমন করত। তিথিকে রাগিয়ে ওর লাবন্যময় মুখটা দেখতো। আর ভাবতো কোন এক ভুল জন্মের স্মৃতিস্মারক তিথি। তিথি বলতোদর্শন পড়তে প্লেটোর কাছে কেন যাবো? আপনি কি তবে ঘাস কাটবেন? আমি আপনার কাছে পড়বো। কি পড়াবেন না?' তিথির কথা শুনে রুদ্র বলতোতোমার মত ছাত্রী পাওয়া তো আমার সাত জন্মের ভাগ্য। ভাগ্যিস শরত্চন্দ্রের সময়ে জন্মাও নি। তাহলে দেবদাসের নায়িকা পার্বতী না হয়ে তুমি হতে।' তিথি বলতোতাই আর তুমি বুঝি দেবদাস হয়ে ঢাকার রাস্তায় তিথি তিথি করতে?' রুদ্র বলতোআমি দেবদাস হবো কেন? তো ব্যর্থ প্রেমিক। আমি হতাম প্যারিস। তোমাকে হেলেন বানিয়ে পুরো ঢাকা শহরে ট্রয় নগরীর মত আরো একটি উপাখ্যান রচনা করতাম। চেগুয়েভারার মত বিদ্রোহী প্রেমিক হয়ে তোমাকে পাওয়ার জন্য ভালোবাসার মিছিল দিতাম।' এবার তিথি হাসল। বলতোথাক,ঢাকা শহর ঢাকা শহরের মতই থাক। শুধু শুধু আমার জন্যে ঢাকা শহরের এক কোটি মানুষ গৃহহীন হবে কেন? তোমাকে কিছুই করতে হবেনা। আমাকে পেতে হলে অল্প একটু ভালোবাসা দিও এতেই চলবে...'

রুদ্র ছিল অনেকটা আকাশের মত। তিথির অভিমান গুলো সেখানে মেঘ হয়ে জমত। কখনো বিষাদ শ্রাবনে তিথির মেঘগুলো যখন আরো ঘনীভূত হত তখনই তা বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পড়ত রুদ্রর চোখ থেকে। তিথির মনে পরে কোন এক জন্মদিনে রুদ্র তিথিকে একটা শাড়ী উপহার দিয়েছিল। আকাশী রঙ তিথির খুব পছন্দ। অনেক খুঁজে তাই তিথির জন্য এই শাড়ীটা কিনেছিল রুদ্র। রুদ্রের অনেক কষ্টের উপার্জনের টাকা। তিথি জানতো হয়তো এই শাড়ী কেনার জন্যে গত কয়েক মাস ধরে রুদ্র টাকা জমিয়েছে। হয়তো বন্ধুরা ফাস্টফুড খেতে রুদ্রকে ডাকলে বলেছেদোস্ত পেটটা কয়েকদিন ধরে ভালোনারে। তোরা খা। আমি দেখি।. . .কিংবা এও হতে পারে গত কয়েকমাসে রুদ্র তার সিগারেট খাওয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। দিনে একটা বা দুইটা। কোনদিন হয়তো তাও না। তিথির চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। একটা মানুষ তাকে এত ভালোবাসে কেন? একটু কম ভালোবাসলে কি হয়। শাড়ী হাতে পেয়ে তিথির খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছিল। কিছু কান্না আছে আনন্দের। হৃদয়ের গভীর থেকে উঠে আসা অজস্র ভালোবাসার একফোঁটা নিরেট অশ্রুবিন্দু। তিথি কখনো শাড়ী পরেনি। রুদ্রের কথা মত একদিন এই শাড়ী পরে এসেছিল। সেদিন রুদ্র তিথিকে বলেছিলপৃথীবিটা কি জানে,তার চেয়েও সুন্দর আকাশ আমার আছে....'

তিথির যখনি মন খারাপ থাকতো তখনি সে এই শাড়ী পরত। মনেহত রুদ্র ওর সমস্ত শরীরে জড়িয়ে আছে। ভালোবাসার অনুভূতিগুলো যে এত তীব্র এত প্রখর তা তিথি বুঝেছিল রুদ্রর কাছ থেকেই। একবার তিথি রুদ্রকে একটি ছবির ফ্রেম উপহার দিয়েছিল। রুদ্র ছিল শখের ফটোগ্রাফার। ফ্রেম দেয়ার পর তিথি বলেছিলখুব সুন্দর একটি ছবি তুলে ফ্রেমে বাঁধাই করবে। এরপর আমাকে দেখাবে,মন থাকবে?' রুদ্র বলেছিলদেখ,আমার মেমোরী গোল্ড ফিশের মত না। তোমার কোন কথা কি আমি ভুলে গেছি?' তিথি বললতা যাও নি। তবে কে জানে। ভুলে যেতেও পারো। একসময় আমাকেও।' রুদ্র তিথির চুল ধরে টান মারলো। বললোএরপর এধরনের কথা বলবেনা। আমার অনেক কষ্ট হয়…'
পরদিন রুদ্র ফ্রেম নিয়ে এল। দু'জনের একটা ছবি খুব সুন্দর করে বাঁধালো। তিথি যতটা ভেবেছিল তার চেয়ে অনেক অনেক সুন্দর হয়েছে। মুচকি হেসে তিথি বললোএটা তোমার কাছে রেখে দাও। স্মৃতি হিসেবে থাকুক।' এই প্রথম রুদ্রের চোখে পানি এলো। তিথি শুধু বললোএত অল্পতেই চোখ ভিজে গেল? তুমি যে সারাক্ষন এইসব কথা বলল।' তিথির কাজল কালো চোখ ভিজে যাওয়ার আগে রুদ্র তার সেই চিরচেনা হাসি দিয়ে বললচল বৃষ্টিতে ভিজি। এখানে বসে কাঁদলে লোকজন তো আমাদের পাগল বলবে। তাও ভালো বৃষ্টির মাঝে কেউ তোমার ভেজা চোখ খেয়াল করবেনা।' তিথি কোন ভাবে নিজেকে সামলে নিয়ে বললোপাগল একটা,চলো'...….ঝুম বৃষ্টির ঢাকা শহর সেদিন তাকিয়ে দেখলো একজোড়া কপোত কপোতির পাগলামি।. . . . .
 
 Pj‡e......................

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন