বৃহস্পতিবার, ২৯ ডিসেম্বর, ২০১১

‎"ছবির ফ্রেম" Part-2

"ছবির ফ্রেম"
By- Udasi Kobi (Rabbi Ahmed)

 Part-2                                                                                                    


ভালোবাসাবাসির মুহূর্ত গুলো খুব দ্রুত শেষ হয়ে যায়। প্রিয় মানুষ গুলোর কাছাকাছি থাকার সময় গুলো কখনো কখনো ছবির ফ্রেমের মত। জীবন্ত অথচ নির্জীব নিষ্প্রান। যে মানুষ গুলো একসময় আমাদের চারপাশ জুড়ে থাকতো তারা হয়ে যায় স্মৃতি। তিথির আকাশে রুদ্রের উপস্থিতিটা অনেকটা এমনই। সম্পর্কের একটা পর্যাযে রুদ্রের ধরা পরে কোলন ক্যান্সার। প্রথম প্রথম তিথিকে রুদ্র বুঝতে দিতনা। এড়িয়ে যেত। রুদ্রের হঠাত্পরিবর্তন তিথি মানতেও পারেনি। তবে তিথি বুঝতে পারতো রুদ্রের কঠিন কিছু হয়েছে। সেই হাসিমুখটা অনেকটাই বিমর্ষ। উদাসীন। একদিন হুট করে তিথির হাতে একটা বক্স ধরিয়ে রুদ্র বলেআগামী কাল ভোর পাঁচটার ফ্লাইটে আমেরিকা যাচ্ছি। প্লিজ জানতে চেওনা কেন। বাসায় গিয়ে বক্সটা খুলবে। আমি আসি। ভালোথেকো…'
তিথিকে কিছু বলার সুযোগ পর্যন্ত রুদ্র দেয়নি। শুধু তাকিয়ে ছিল রুদ্র চলে যাওয়ার পথের দিকে অবাক দৃষ্টিতে।

আজ থেকে পনের বছর আগে কোন এক বিষন্ন সন্ধ্যে বেলা। তিথি নামের একুশ বছরের একটি মেয়ে কাঁদছে। রুমের দরজা জানালা বন্ধ করে। পাশেই খোলা রুদ্রর চিঠি। একটু পর পর তাকাচ্ছে রুদ্রর ফেরত দেয়া ফ্রেমটির দিকে। যেখানে শুধু রুদ্রের ছবি। তিথির অংশটুকু রুদ্র ছিঁড়ে রেখে দিয়েছে। রুদ্র কিছু ভয়ংকর কথা লিখেছে চিঠিতে

তিথি,
প্রথমেই বলে নিচ্ছি কাঁদবেনা। হাতের লেখা যেন সুন্দর হয় এজন্য জেল পেন দিয়ে স্কেল টেনে টেনে লিখেছি। তোমার চোখের পানিতে আবার যেন মুছে না যায়। তাহলে ছোট্ট এই পৃথীবির বুকে বাঁচার যে শেষ ইচ্ছেটুকু আছে তাও কিন্তু বিলীন হয়ে যাবে। মনে পরে? আকাশে মেঘ দেখলে তুমি বলতে দেখ রুদ্র আকাশে দুটো মেঘ। একটা ছেলে আরেক টা মেয়ে। এরা দু জন দু জনকে খুব ভালোবাসে। কিন্তু যখন অভিমান হয় তখন একে অন্যের ওপর ঝাঁপিয়ে পরে। তখন এদের কষ্টগুলো বৃষ্টি হয়ে ঝড়ে পরে। ঠিক তোমার আর আমার মত। তোমার কথা শুনে দেখতাম আকাশে মেঘের বিন্দু মাত্র চিহ্ন নেই অথচ তোমার দু চোখ ছলছল করছে,তুমি নিশ্চই অবাক হচ্ছো তোমার দেয়া ফ্রেম কেন ফিরিয়ে দিয়েছি। আমাদের ছবিটা কেন দুই ভাগ করা। শোন,ক্যান্সার নামের এক ভয়াবহ কাঁচি ছবিটাকে দু ভাগ করতে বাধ্য করেছে। তোমার ভাগ আমার কাছে থাকুক আর আমারটা তোমার কাছে। আসলে জীবনটা ছবির ফ্রেমের মত। স্মৃতি বদলের সাথে সাথে ছবির পরিবর্তন হয়। কিছু জীবন আছে একটি স্মৃতিই ধরে রাখে। একসময় ফ্রেম পুরনো হয়ে যায়। ছবির মানুষটি ঝাপসা থেকে ঝাপসাতর হয়। জীবন চলে তার নিজস্ব নিয়মে।
স্মৃতি বদলের মত ছবিও বদলায়। তোমার জীবনে আমি ছিলাম স্মৃতি। একসময় তোমার জীবনে অন্য কেউ আসবে। তাকে নিয়ে জোছনা বিলাস করবে। আমি না হয় তারা হয়ে তোমাদের দেখবো। আচ্ছা মানুষ মরে গেলে নাকি তারা হয়ে যায়। তুমিতো দর্শন ভালোবাসো। আমাকে একটু জানিওতো।
তুমি নিশ্চই কাঁদছো। শোন জীবনের চরম বাস্তবতা এমনই। তোমার জীবনটা নষ্ট হোক তাও চাইনা। তোমার জীবনে নতুন কেউ আসবে। যাকে নিয়ে সুখের সংসার করবে। প্রথম প্রথম মন মানবেনা। কিন্তু মানিয়ে নিতে হবে। আমার জন্যে। অনেক কষ্টে আমেরিকা যাওয়ার টাকা জোগাড় হয়েছে। তোমাকে তো বলাই হয়নি। আমি একটা এন জি তে কাজ করতাম। অনেকটা অফিসিয়াল কাজ। পোস্টটা ছোট বলে তোমাকে কখনো বলিনি। ওরাই আমাকে আমেরিকায় আসার খরচ দিয়েছে। আমার বেঁচে থাকার খুব ইচ্ছে। যদি দেশে ফিরে আসি তবে তোমার জন্যে একটা নীল শাড়ী নিয়ে আসবো। অই শাড়ীটা বেশ পুরনো হয়ে গেছে তাইনা। ভালো থাকার চেষ্টা করো....

-রুদ্র

তিথির বিয়ের সময় অনেক জিনিসের সাথে ছবির ফ্রেমটাও তিথি সাথে করে শশুড় বাড়িতে নিয়ে এসেছিল। তিথির শাশুড়ী একবার ঘর গোছাতে গিয়ে ফ্রেমটা দেখে বললোতিথি মা,ফ্রেমটা ফাঁকা কেন? আজই তোমার আর আশরাফের যে যুগল ছবিটা আছে তা দেয়ালে টানিয়ে দাও। বাচ্চা মেয়ে,এটুকুও বলে দিতে হয়।' মাঝমাঝে তিথির খুব ইচ্ছে হয় তিথির ছবির পাশে রুদ্রর ছবিটা লাগাতে। মাঝেমাঝে ডায়রিটা খুলে রুদ্রর ছবি বের করে। হাত দিয়ে নাড়াচাড়া করে আবার রেখে দেয়। তিথির চোখ ঝাপসা হয়ে আসে। একসময় চোখের কোন ঘেঁষে ঝড়ে পরে অজস্র বেদনার এক ফোঁটা লোনা অশ্রুবিন্দু...
_____THE END____

 

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন