শুক্রবার, ২ মার্চ, ২০১২

শেষ বিকেলের গল্প


ভালবাসার ডাকপিয়ন (the cafe of love)
শেষ বিকেলের গল্প
by Samiya Sami

ইদানিং বেশ ভাল সময় কাটছে আমারকোনকিছুর নিয়ম মেনে করতে হচ্ছে নাযখন ইছ্ছা ঘুম থেকে উঠছি, যখন ইছ্ছা খাচ্ছি, টিভি দেখছি, গেমস খেলছি,কেউ কিছুই বলছে নাসবার এক্সট্রা কেয়ার পাচ্ছিক্লাস করেতে হচ্ছে না, assignment, class test,mock test এগুলো থেকে বেঁচে গেছিএখন আমি প্রায়ই ঘুরতে বের হই এখন ভাইয়াই আমাকে নিয়ে যায় বাইরে, এত ব্যস্ততার ফাঁকেওআগে কত বলতাম আমার ভাল লাগে না বন্দি জীবন আমি বাইরে যাব, প্লিজ আমাকে নিয়ে কেউ বের হওকাল ঘুরে এলাম বই মেলা থেকেসবই ভাল যাচ্ছিল কিন্তু যখন পেইনটা শুরু হয় তখন আর সহ্য করতে পারি নামনে হয় যেন পৃথিবীর সমস্ত মানুষ এর ব্যথা আমার উপর এসে চেপেছেকিন্তু কিছু করার নাইআমি হাজার লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করেও পারি নাসবাই বুঝে যায়্

আর তখন সবাই অস্থির হয়ে যায়্মনে হয় যেন আমার ব্যথার প্রতিটি অনুভুতি ওদের নিউরন বেয়ে মস্তিশ্কে চলে যাচ্ছেএখন কেউ আর আগের মত হাশি খুশি নাইসবাই কেমন মন মরা হয়ে থাকেঅনেক কষ্ট করে আমার সামনে সৌজন্যতার একটা হাসি বজায় রাখেমা দিন দিন কেমন হয়ে যাচ্ছে, মনে হয় যেন দেহে প্রান আছে কিন্তু প্রান্জলতা নাইবাবা ও ৯-৫ টা অফিস ঠিকই করছে কিন্তু রোবটের মত হয়ে গেছে,কোন অনুভুতি নাইআর আমার ভাই আর ছোট বোন এর কথা কি বলব? যারা এই পরিবারে সারাদিন হইচই করতাম অথচ এখন মনে হয় নীরব কোন ভুতের বাড়িএকটা পিন পরলেও শব্দ শোনা যায়্ঘড়ি গুলোর টিক টিক শব্দ শুনতে পাই সারাক্ষনমনে হয় ওরা যেন আমাকে বলে দিচ্ছে আমার গন্তব্যে যাবার সময় এসেছেমাঝে মাঝে ক্লাসে যাই ভাল লাগলেভার্সিটির সবাই জানে আমার অসুস্থতার কথা তাই কেউ কিছু বলে নাহোমটাস্ক না করলে কিছু বলে না টিচার রা ফ্রেন্ডরা অনেক ভাল ব্যবহার করেকিন্তু আগের মত আর কেউ ফান করে না আমার সাথেআর কেউ বলে না সামিয়া চল আজ সবাই মিলে ফুচকা খেতে যাই, চল যাই টিএসসিতে যেয়ে আড্ডা দিয়ে আসি

সবাই এখন আমাকে ক্যান্টিন এ নিয়ে গিয়ে কি খাব তাই খাওয়ায়, গিফট দেয়ফ্রেন্ডরা মাঝে মাঝেই বাসায় আসেকিন্তু একজন ফ্রেন্ড আছে কিনা কখনই আসে না আমার বাসায়যার সাথে আমার বন্ধুত্ত ভার্সিটি লাইফের এর প্রথম দিন থেকেই...এই ২জন কে আলাদা কেউ কখনও দেখেনি একদম শিক্ষক মহল থেকে শুরু করে ছাত্র সবাই জানতো আমাদের বন্ধুত্তের কথা আমি টুম্পার কথা বলছিআমরা প্রায়ই বলতাম এই ক্যাম্পাস এ একজন একজনকে ছাড়া এতিমকিন্তু এখন মনে হচ্ছে সত্যি টুম্পা এতিম হতে যাচ্ছেও আমাকে কাল অনেক কেঁদে বলেছিল, সামিয়া দেখ প্লিজ আমাকে ছেড়ে তুই যাস নাআমি এতিম হয়ে যাবও আর আগের মত পড়ালেখা করেনা, কিন্তু করবে কিভাবে? আমি তো পড়ছি না ওর সাথে আমরা সব কিছু একসাথে পড়তাম, নোট্‌স লিখতাম, স্কাইপি তে ম্যাথ সলভ করতামএখন আর ও টেস্ট এ বেশি মার্কস পায় না, কারন আমি ও যে পাই নাআমাদের বন্ধুত্ত এমনি যে স্যার যদি এক্সাম টাইমে এ ২জন কে সরিয়ে বসাত তবুও এক মার্কস পেতামমাঝে মাঝে ও ফার্স্ট হত মাঝে মাঝে আমি ফার্স্ট হতাম্এটাই খারাপ লাগে যে ফান গুলো করতে পারছি না

পড়তে না বসার জন্য বকুনি শুনছি নাএকটা এক্সাম এ কম মার্ক্স পেলে টিচাররা আর বলবে না, আপনী আর মানুষ হইলেন নাকিন্তু আমার কি করার আছে এখানে, ভাগ্যকে মেনে নেয়া ছাড়া কালকে একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম, মা ভেবেছে আমি বুঝি ঘুমিয়েছি, আসলে আমি ঘুমাই নাইআমি মার রুমে এ গিয়ে দেখি মা একেবারে ছোট শিশুর মত কাঁদছে, ছোট বোনটা আমার সাথেই ঘুমায়ও আর জোরে কাঁদতে পারে না, কাথা মুড়ি দিয়ে কাঁদে আর বাবার কথা কি বলবো, মনে হয় যেন এখনি হার্ট এটাক করবেভাইয়াও পুরা নির্বিকার হয়ে গেছেআমি তবু চেষ্টা করি হাসি খুশি থাকার,ওদের কষ্ট দুর করার

আমার এখন বড় বাঁচতে ইচ্ছা করেআমার জন্য না, আমার চারপাশের মানুষের জন্যআমার পৃথিবীটা বেশি বড় না, অনেক ছোট... তাই এই ছোট পৃথিবীর মানুষগুলোকে কষ্ট দিতে চাই নাওদের কষ্ট ভোলাতে এতদিন যা করিনি, এখন তাই করছিযেমন আজ করলাম কি, ইচ্ছা মত সাজু-গুজু করলামযেটা আমাকে কেউ কখনও করাতে পারেনিআর আশ্চর্য একটা বিষয় খেয়াল করলাম সাজাটা অনেক কঠিন কাজআর নিজেকে নতুন ভাবে আবিষ্কার করলাম, কারন আমাকে অনেক সুন্দর লাগছিলনিজেকেই চিনতে পারছিলামনাকালো হলেও দারুন লাগছিল আমাকে সাজার পরআমি এখনও আমার ছেলেমানুষী গুলো চালিয়ে যাচ্ছিআশা রাখি মরার আগ দিন পর্যন্ত আমি হার মানবো নাকিছুতেই হার মানব না, সামান্য ক্যান্সারের এর কাছেচাওয়া শুধু এতটুকুই যেন আমার মৃত্যুর শোঁক আমার পৃথিবীর মানুষগুলো খুব জলদি কাটিয়ে উঠতে পারেএটাই আমার শেষ চাওয়া...


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন