মঙ্গলবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

ভালবাসার গল্প....2

" ঘরোয়া ভালবাসা দিবস...."
By- Jahedul Alam ( Jahed)

আমার মোবাইলের আবদারটা আর উপেক্ষা করতে পারলেন না বাবা, এস.এস.সি তে এ+ পাবার মোবাইল কিনে না দেবার কোন কারনও নেই। 'নতুন জিনিস, বেশী টেপাটিপি করিয়েন না, নষ্ট হইয়া যাইব' এটি, এম, শাম্সুজ্জামানের এই ডায়ালগটা শুনিয়ে বাবা আমার হাতে মোবাইলটা দিল, বাবা মেয়ে আমরা বন্ধুর মত।

সিম চালু করতেই একটা ফোন আসল! আমিত অবাক! আমার নাম্বারটা ভালভাবে আমিও জানিনা এখনো অথচ আমাকে কল করল আবার কে?

-হ্যালো..
-জ্বি বলেন, কাকে চাচ্ছেন?
- এটাতো আর ফোন ফ্যাক্স এর দোকান না যে আরেকজন কে চাইব! ফোনটা যেহেতু আপনার, আপনাকেই চাচ্ছি।

-কিন্তু, কে আপনি? সিমটা আমি এইমাত্র চালু করলাম, মোবাইলটাও আজ কেনা, তাই একটু কনফিউসড!

-আসলেই তাই? আমার সাথে কথা বলেই মোবাইলটা উদ্ভোধন হল, আপনার তো আমাকে মিষ্টিমূখ করানো উচিত। আপনার আমার নাম্বারে একটামাত্র ডিজিট অমিল, আন্দাজ করে কল দিলাম, ভাগ্য ভাল আপনার মত সুকন্ঠী মিলে গেল।
এই যে ফাজলামি রাখেন, অপরিচিত কারো সাথে কথা বলার কোন মানে হয়না। এই বলে ফোনটা কেটে দিলাম। একটু পরে আবার ফোন করে বসল, ধরলাম না।

সারাটা সময় এখন মোবাইল নিয়ে পড়ে থাকি, বসতে টেপাটেপি, দাড়াতেই টেপাটেপি, খাইতে বসলেও মোবাইলটা সাথে থাকা চাই। শুইয়ে শুইয়ে মোবাইলে গেমস খেলছিলাম, এমন সময় আবারও সেই ছেলেটির ফোন, কি সাহস! রাতেও ফোন করে বসে আছে।

- কি ব্যাপার আপনার সমস্যা কোথায়? আপনাকে না আমি নিষেধ করছি ফোন না করতে, বললাম না আমি অপরিচিতদের সাথে কথা বলিনা।
- আপনার সাথে আমি ২ মিনিট কথা বলব, এরপর আপনি না চাইলে আর কখনো বিরক্ত করবনা।
- ঠিক আছে বলেন, তবে ২ মিনিটের বেশি নয় ( আমি বিরক্ত হয়ে বললাম্)।
- কখনো হাসপাতালে গিয়েছেন?
- কিছুটা ভড়কে গিয়ে বললাম, কেন? গত সপ্তাহেও তো ছোট খালার বাচ্চা প্রসবের সময় একরাত ছিলাম আমি হাসপাতালে।
- তাহলে আপনি সঠিক জায়গাতে গিয়েছেন। আপনি দেখেছেন নবজাতকদের হাতে বা পায়ে একটা ব্যান্ড লাগানো থাকে?
- হ্যাঁ, দেখেছি,
- ও টা তে বাচ্চার নাম, আর বিস্তারিত তথ্য দেয়া থাকে, কারণ ঐ নবজাতকটি সবার কাছে অপরিচিত, এমনকি তার মার কাছেও। কথাটি এ জন্য বলছি যে সবাই একসময় অপরিচিত থাকে, এমনকি নিজের সদ্য জন্ম নেয়া সন্তানটি ও তার মায়ের কাছেও অচেনা থাকে, অপরিচিতদের সাথে কথা বলাটা দোষের কিছুনা। বুঝতে পারছেন? যত্তসব!!

এই বলে অদ্ভূত ছেলেটি ফোন রেখে দিল। ছেলেটি অদ্ভূত হলেও তার যুক্তিটা কেন জানি আমার কাছে ভাল লাগল।

পড়াশুনা শেষ করে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, হঠাত কেন জানি ছেলেটির কথা মনে পড়ল, আরে সত্যিই তো ছেলেটি আর বিরক্ত করছেনা। তার মানে ছেলেটি যা বলছে তা মানছে! ছেলেটি কিন্তু যুক্তিবাদী, আমি কি একটা কল করে দেখব? ভাবতে ভাবতে কখন ডায়াল করে ফেললাম নিজেও জানি না! হঠাত টনক নড়লো ঐ প্রান্ত থেকে
-কি অপরিচিতা? অপরিচিত মানুষ কে ফোন করলেন!!?
- স্বাভাবিক হয়ে বললাম, জি করলাম, কেমন আছেন?
- ভাল, আপনার কি অবস্থা?

এভাবে আর দশটা ফোনালাপের মত আমাদের আলাপটা শুরু হল, এবং তা মাঝে মাঝে চলত, আস্তে আস্তে কথার পরিমান বেড়ে চলল, সম্পর্কটাও ইতিমধ্যে তুমিতে নেমে এসেছে। সময়ের দাবীতে দুজনেই ফেসবুকের গর্বিত ইউজার হয়ে গেলাম। ফেসবুকে এলে কত অপরিচিত/ অপরিচিতা যে আপনার চেয়ে আপন হয়ে যায় সেটা আমার চেয়ে আপনারাই ভাল বুঝেন। মিথুন আর আমার মাঝেও এর ব্যাতিক্রম কিছুই বা কেন হবে? ফোনালাপ, চ্যাটিং, কমেন্ট আদান-প্রদান ভালই চলছিল।

মিথুন আমার চেয়ে ২ বছরের সিনিয়র, প্রাইভেট ভার্সিটিতে বি,বি,এ পড়ছে।
গুছিয়ে লেখা বা বলাটা বোধহয় আমার কখনও শেখা হবেনা!, এই যে দেখেন অপরিচিত মিথুনের কথা বলে যাচ্ছি অথচ নিজের কথাটাই আপনাদের বলা হয়নি। আমি মিথিলা হামিদ্, বাবা আব্দুল হামিদের সাথে মিলিয়ে নামটা রাখা, যদিও সবাই মিথি নামেই ডাকে, মিথুন কি নামে ডাকে জানেন? 'মিতু'। বাসায় ছোট ভাই, মা-বাবা, সুপ্তি (গ্রামে থাকতে নাম ছিল সফুরা, ঢাকায় আসার পর নামটা পাল্টে দিয়েছি আমি, আম্মুকে কাজকর্মে সাহায্য করে) এই নিয়ে আমাদের পরিবার। এখন অবশ্য লন্ডন ফেরত মিন্টু মামা ও আছেন্।

আজ অনেক মজা করলাম বাসায়, মিন্টু মামার আনা Nikon ক্যামেরা দিয়ে অনেক ফটো উঠালাম। সুপ্তিরও অনেক গুলো ফটো তুললাম। মজার ব্যাপার হল সুপ্তির আফ্রিকান কালারটাকে মিন্টু মামার ১৪ মেগা পিক্সেল এর ক্যামেরা ফর্সা বানাতে পারলনা। মিথুনের ভালবাসার প্রপোজটা ঝুলিয়ে রেখেছি ১৪ই ফেব্রুয়ারী, ভালবাসা দিবসে চমক হিসেবে দেয়ার জন্য। কিন্তু ভালবাসি তাকে প্রচুর!

মিথুনের প্রোফাইলে ফটো থাকলেও আমারটাই নেই, আমাকে না দেখে ছেলেটি আমায় ভালবেসে যাচ্ছে জেনে নিজেকে অনেক লাকি মনে করি। অনেকদিন ধরে ফটো দেয়ার জন্য বলছিল সে। ফেব্রুয়ারীর ১২ তারিখে সে আমাকে বলল ২ দিন পর তো তোমাকে সরাসরি দেখব একটা ছবি অন্তত দাও, নইলে তোমায় চিনব কেমন করে? ছোটবেলা থেকে আমি একটু বেশি পরখ প্রকৃতির ছিলাম, যে কোন কিছুই পরীক্ষা করতাম করার আগে, তাই বলে ভালবাসা নিয়ে পরীক্ষা করার ইচ্ছা আমার ছিলনা, সেটা বিশ্বাসের উপর নির্ভর্, মিথুনের উপর সে বিশ্বাস আমার আছে। তারপর যে কাজটি করলাম সেটা মিথুন কে চমকে দেয়ার জন্য। সুপ্তির ফটোগুলো আমার প্রোফাইলে upload করে দিলাম, ফটো দেয়ার আগেও ১৪ ই ফেব্রুয়ারীর প্ল্যান, কোথায় দেখা করব সব ঠিক করে নিলাম দুজনে।

সকালে ঘুম থেকে উঠে আরও কিছু কথা মিথুন কে জানাবো বলে ফেসবুক ওপেন করলাম, মন আমার অনেক খুশী, ভালবাসার মানুষটির সাথে কাল দেখা হচ্ছে। মেসেজ খুললাম, মিথুনের মেসেজ, চমকে উঠলাম পড়তে গিয়ে, কি লিখেছে শুনবেন?

মিতু,
আমার ভাবতে অবাক লাগে এরকম কূত্সিত একটা মেয়ের সাথে আমি এতদিন প্রেম করেছি! আরে আমাদের বাসার কাজের মেয়ে ও তোমার চেয়ে সুন্দর্! আর কখনও আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করোনা।

মেসেজ পড়ে আমার কেমন লাগছিল বুঝাতে পারবনা। এটাই কি প্রেম? যারা বাহ্যিক সৌন্দর্য দেখে ভালবাসে তাদের ভালবাসা না পাওয়ায় ভাল। খারাপ লাগলেও মনে মনে আল্লাহকে ধন্যবাদ দিতে লাগলাম, যে একটা খারাপ, নিচু মনের মানুষের সাথে আমাকে দেখা করতে হয়নি।

রাতে ঘুম হলনা, সকাল বেলা জেরিনের ফোনটা কাঁটা ঘাঁ' এ নুনের ছিটা মনে হতে লাগল, আমি আর রাফিদ ফ্যাণ্টাসি কিংডমে যাচ্ছি, তোরা কই যাবি? জেরিন তোকে পরে কল করছি বলে ফোনটা কেটে দিয়ে সুইচ অফ করে দিলাম প্রিয় মোবাইলটার। না হয়্, একটু পরপর নিহা, তানিয়া, মালিহাদের কল আসতে থাকবে।

আমার বাবার কথা বলেছিলাম না, সকালে অফিসে যাবার সময় কি বলে গেছে জানেন?- কিরে মা তোর মন খারাপ কেন? আমি আজ দুপুরের আগে আসছি, কোন রান্না বান্না হবেনা বাসায় আজ। দুপুরের আগে বাবা ফিরে আসলেন্, হাতে KFC ফ্যামিলি প্যাক, ৩টি ষ্টিক গোলাপ, ভাই, মা, আর আমার জন্য। খাওয়া দাওয়া শেষ হলে সন্ধ্যায় বসুন্ধরা সিনেপ্লেক্স এ মুভি দেখতে যাব সবাই। ইমপ্রেস টেলিফিল্ম এর নতুন একটা ছবি চলছে সেখানে। এটাই ছিল আমাদের ঘরোয়া ভালবাসা দিবস। বিশ্বাস করেন আমার মোটেও খারাপ লাগছেনা নিজের এতদিনের ভালবাসা কে না পেয়ে। বরং ভাল লাগছে এটা ভেবে এত বড় একটা দিনে মিথুনের মত ছোট/ নিচু মনের একটা মানুষের সাথে আমার দেখা করতে হয়নি।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন