শুক্রবার, ১০ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

ভালবাসার রঙ নেই...(২য় পর্ব)


ভালবাসার রঙ নেই...(২য় পর্ব)

অদ্ভুত সব দুঃস্বপ্ন দেখে রাত কাটলসকালে ঘুম থেকে উঠেই কল করলাম ওকে
হ্যালো
আমি বলছি
ওহ! বল
আমি পরশু চলে যাচ্ছিএটা জানানোর জন্যই ফোন করলাম
পরশু? ওহ! আচ্ছা ... আমি আর কি বলব! ভাল থেকো
কোন কিছু জানার দরকার হলে মৌ কে জিজ্ঞেস করোওর কাছে আমার সব খবর থাকবে
আচ্ছা
রাখিআমি কথা শেষ করলাম
ওর একবারও ইচ্ছা করলো না আমার সাথে আরেকবার দেখা করতে? কি জানি! ছেলেরা মনে হয় এমনি হয়অনুভূতিহীন!

দুই দিনের মধ্যে খুব তাড়াহুড়ো করে টিকেট বুকিং করে ফেললামআর থাকতে ইচ্ছে করছে না এখানেএকটা মৃত মানুষকে বাঁচিয়ে তুলে আবার মেরে ফেললে তার যেমন কষ্ট হওয়ার কথা, তেমনি কষ্ট পাচ্ছি আমিআমার সব অনুভূতিগুলো ক্ষণিকের জন্য জীবিত করে আবার মেরে ফেলেছেমৌ কে আমার ফ্লাইটের সময় জানিয়ে দিলামকেন, তা জানিনাহয়ত মনে মনে এটাই চাচ্ছিলাম যে প্রবাল ওর কাছ থেকে খবর নিয়ে আমার সাথে এয়ারপোর্টে দেখা করতে যাক

দুই দিন পর...
আমি এয়ারপোর্টেকিছুক্ষণ পর আমার ফ্লাইটদুই দিনের মধ্যে খুব তাড়াহুড়ো করে টিকেট বুকিং করেছিআর থাকতে ইচ্ছে করছিল না এখানেএকটা মৃত মানুষকে বাঁচিয়ে তুলে আবার মেরে ফেললে তার যেমন কষ্ট হওয়ার কথা, তেমনি কষ্ট পাচ্ছি আমিআমার সব অনুভূতিগুলো ক্ষণিকের জন্য কেউ জীবিত করে আবার মেরে ফেলেছে মৌ কে আমার ফ্লাইটের সময় জানিয়ে দিয়েছিলামযদি মৌ এর কাছ থেকে খবর নিয়ে ও আসে? যদি আমাকে কিছু বলতে চায়? বারবার আশেপাশে তাকাচ্ছি আমিহঠাৎ যদি ওকে ছুটে আসতে দেখি?
নাহ, ও আসেনিসিনেমাগুলোতে এসব কী দেখায় তাহলে? সব ভুল! প্রবালের কথাই শেষমেশ সত্যি হলঅনেক আগেই ও আমাকে বলেছিল জীবন কোন হিন্দি সিনেমা নাআমার তখন কথাটা ভাল লাগেনিএখন হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি

আমি এখন ক্যালিফোর্নিয়াতে আমার বাসায়ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছি একটা অপদার্থকেকিন্তু কোথায় যেন একটা কিছু ভুল আছেএকটা শূন্যতানাহ, ওই গাধাকে আমি একদম মিস করছি নাআমি কী এতই সস্তা নাকি? আমাকে পাত্তা দিবেনা, আর আমি ওর পেছনে ঘুরেই যাবো?

রাতে স্বপ্নে দেখলাম প্রবাল আমার হাত ধরে আছেআমি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে আছিকিন্তু ও কাঁদছে কেন? ঘুম ভেঙ্গে গেলঅনেক কষ্ট হচ্ছেআমার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছেচোখের পানি এত গরম হয় কেন? নাকি অনুভূতি যত তীব্র, অশ্রু ততো উষ্ণ হয়? ধ্যাত! কীসব আজেবাজে চিন্তা করি আমি
কী ভেবে হঠাৎ ফোনটা হাতে নিলামখুব দ্রুত ডায়াল করে ফেললাম ওর নাম্বারআমার মাথা পুরোপুরি শূন্য এই মুহূর্তেমাথায় কিছুই কাজ করছেনা
হ্যালো
প্রবাল, আমি
ওহ! ঠিকমত পৌঁছেছ তুমি?”
হ্যাঁ
কেমন আছ তুমি?”
কী বলব বুঝতে পারছিনাআমি তো ভাল নেই! কী জবাব দেই? হঠাৎ বোকার মত ফুঁপিয়ে কাঁদা শুরু করলাম
এই মেয়ে! তুমি কাঁদছ কেন? শোনো, কান্নাকাটি আমার ভাল লাগেনাএকটা কাজ কর...
কী?” আমি তখনও ফোঁপাচ্ছিহঠাৎ করে কী যে হয়ে গেল আমার...উফ
তুমি কালকে পরশুর মধ্যে টিকেট করে দেশে এসে পড়
আমার চাকরি?”
ছুটি নাওআর ইন্টারনেট তো আছেই যে কোন সময় এমপ্লয়ারের সাথে যোগাযোগ করার জন্য! নেট তো শুধু প্রেম করার জন্য না!
ফালতু কথা বলবে না
আর এপার্টমেন্ট ছেড়ে দাও
কেন?”
কারণ, তুমি কবে ফিরবে তার কোন ঠিক নেই
আচ্ছা
ফোন রেখে দিয়ে আবার কাঁদলামঅনেক দিনের জমিয়ে রাখা সব অশ্রু কী আজকে ঝরে পড়বে?
প্রাবাল যা যা বলেছে, সব করলামযদিও ওর কথার মানে আমি পুরোপুরি বুঝতে পারিনিএখন শুধুই অপেক্ষার পালাপ্রবাল কেন দেশে ফিরতে বলল আমাকে?

জিয়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর
আমি এয়ারপোর্টে চুপচাপ দাঁড়িয়েও আসেনা কেন?
পনের মিনিট দেরি করে ও আসলহাতে একগাদা ফুল
এত দেরি করলে?”
ফুল কিনতে দেরি হয়েছেপ্রথমে তো ফুল ছাড়াই এসেছলামপরে ভাবলাম, আমার হাতে ফুল না দেখলে যদি তুমি নাটকীয় কায়দায় কান্নাকাটি শুরু কর? তাই আবার দৌড়ে গেলাম ফুল কিনতে! তুমি তো জানই, কান্নাকাটি আমার ভাল লাগেনা
ওহ!কী বলব আমি! ফুল তো আমার জন্য আনেনি, এনেছে যাতে আমার কান্না সহ্য করতে না হয়!
আচ্ছা এবার বল বিয়ে কবে করবে? আজকে? নাকি কয়েকদিন পর?”
বিয়ে?”
নয়তো আমি তোমাকে এতো তাড়াহুড়ো করে আসতে বললাম কেন? আজকেই করি, কী বল?”
আজকে বিয়ে?” আমি হাসব না কাঁদব বুঝতে পারছিনাকেমন পাগলের মত কথা বলছে ওআজকে নাকি বিয়ে!
দেখ, বিয়ের জন্য আমি তো আর পাগল নাকিন্তু, তোমার থাকার কোন জায়গা নেই... আর বিয়ে ছাড়া তো তোমাকে আমি বাসায় নিয়ে রাখতে পারিনা!
আমি ভ্রু কুঁচকালামএমন সময়ে মানুষ এই ধরণের রসিকতা করতে পারে?
তোমার যা ভাল মনে হয়, তাই করআমার মাথা কেমন যেন ঘুরছেসিদ্ধান্ত নেয়ার মত ক্ষমতা নেই এই মুহূর্তে
তাহলে আমি আম্মুকে ফোন করি আগে?”
ঠিক আছে, কর
প্রবাল আমার হবু শাশুড়িকে ফোন করল
আমার কান্না পাচ্ছে অনেকআজকাল মনে হয় আমার একটু বেশিই কান্না পায়
হুম... কথা শেষআম্মুকে বুঝিয়ে বলতে বলতে টায়ার্ড হয়ে গেছিতুমি কাঁদছ নাকি আবার? কী হয়েছে?”
কিছুনাআমার ইচ্ছা করছিল ওর বুকে মাথা রেখে কাঁদিও আমাকে জরিয়ে ধরছেনা কেন?
কেঁদো নাচোখ মুছবলে পকেট থেকে একটা টিস্যু বের করে আমার হাতে ধরিয়ে দিলনাহ, গাধা এখনো গাধাই আছেওর বুদ্ধি কখনই হবেনাএ কেমন মানুষের পাল্লায় পড়লাম আমি!
বল এখন কোথায় যাবে?” প্রবাল ঘড়ি দেখতে দেখতে জিজ্ঞেস করল
শাড়ি কিনতে
শাড়ি কিনবে? টাকা এনেছ?”
তুমি কিনে দিবেনা?” অসহায় একটা চেহারা নিয়ে ওর দিকে তাকালামদেখি ও মুচকি হাসছেআমার গোমড়া মুখ দেখে অনেক মজা পেয়েছেএই হচ্ছেন আমার হবু স্বামী

আমরা দুজন রিকশায়ঠিক করেছি আগে বিয়ের টুকটাক কেনাকাটা করব, তারপর ওর বাসায় বিয়ে হবেকয়েকজন আত্মীয় আর বন্ধুবান্ধবকে ফোনে দাওয়াত দিয়েছে প্রবালতবে এক সপ্তাহ পরে বৌভাত হবে ধুমধাম করে
আমার কাছে সবকিছু স্বপ্নের মত লাগছেকিছুদিন আগেও পৃথিবীর দুই প্রান্তে ছিলাম আমরা দুজনআর আজকে একি রিকশায় পাশাপাশি বসে আছিআমার অবশ্য অনেক মজা লাগছে ব্যাপারটা ভাবতেহৈমন্তীর নায়কের বলতে ইচ্ছা করছে, “আমি ইহাকে পাইলাম!আর রিকশা জিনিসটা যিনি আবিষ্কার করেছেন তাকে ধন্যবাদ দিতে ইচ্ছা করছে অনেক, এত রোমান্টিক একটা যানবাহন আবিষ্কারের জন্য
আচ্ছা, তুমি কি আমাকে আগের মতই ভালবাস?” ও চুপচাপ দেখে আমি জিজ্ঞেস করলাম
কী মনে হয়?”
কই...আমি তো দেখিনা
দেখবে কিভাবে? ভালবাসার কি রঙ আছে নাকি?” বলে ও হাসতে থাকল
আবার বলা শুরু করল,
শোন, ভালবাসা হচ্ছে বসন্তের হাল্কা ঠাণ্ডা বাতাসের মতএর বেশি আমি বোঝাতে পারবনা
আজব একটা মানুষ! ভালবাসা নাকি বাতাসের মত!
এরপর আমরা অনেকক্ষণ ধরে চুপ
আচ্ছা, এই বুড়ো বয়সে বর সাজতে লজ্জা লাগবেনা তোমার?” এই নিরস লোকটাকে জ্বালাতে আমার অনেক ভাল লাগে
লজ্জা লাগবে কেন? বিয়ে তো করছি একটা বুড়িকেই!
খবরদার আমাকে বুড়ি বলবে নাআমি বুড়ি হতে অনেক দেরি এখনও
ওহ আচ্ছাআবার হাসছেকী যন্ত্রণা!
ওটা কি ফুচকার গাড়ি নাকি?” রাস্তার সাইডে একটা ফুচকার ভ্যান দেখিয়ে বললাম
হুমএই রিকশা, থামাওআমরা এখানেই নেমে যাববলে ও রিকশাওয়ালাকে ভাড়া দিয়ে দিল
এখানে নেমে যাব মানে?”
চল তোমাকে ফুচকা খাওয়াই আগেতুমি না ফুচকা অনেক পছন্দ কর?”
তুমি না একটু আগে বললে হাতে বেশি সময় নেই?”
অসুবিধা নেইতুমি পাঁচ-দশ মিনিটে খাওয়া শেষ করতে পারবে না?”
আমরা রিকশা থেকে নামলামএই বিচিত্র মানুষটা আমাকে এত ভালবাসে? চুপচাপ থেকেও মানুষ এত ভালবাসে কিভাবে? ওর চোখের দিকে একবার তাকিয়ে দেখতে ইচ্ছা করছে আমারকিন্তু নিরস লোকটা আমাকে সেই সুযোগও দিলনা
এইদিকে আমি বিয়ের চিন্তায় অস্থির, আর পৃথিবীর সবচেয়ে বেরসিক মানুষটা আমাকে হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে ফুচকার ভ্যানের দিকেআবার আদেশ করার ভঙ্গিতে বলছে,
এত বড় হিল পর কেন? ফ্ল্যাট স্যান্ডেল পরবে, পা ভাল থাকবে

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন