সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারী, ২০১২

অপ্রত্যাশিত


অপ্রত্যাশিত

রান্না করতে করতে একেবারে হাঁপিয়ে উঠেছে বৃষ্টি আজ মেঘের জন্মদিন তাই বৃষ্টি আর শফিক মেঘের এপার্টমেন্টে এসেছে ভুনা খিচুরি আর গরুর মাংস রান্না করার মহান দায়িত্ব পরেছে বৃষ্টির উপর বৃষ্টি বহুবার মেঘের এই ফ্ল্যাটে এসেছে গত পাঁচটা বছরে এখানে অনেক অনেক রান্না করতে হয়েছে বৃষ্টিকে

                     মাংসটা চুলায় বসিয়ে দিয়ে একটু বিশ্রাম নেবার জন্য বারান্দায় এসে দাড়াল বৃষ্টি এই শীতের সকালে বারান্দায় রোদ পোহাতে পোহাতে মেঘ আর শফিক দুজনে বিশাল মনোযোগ দিয়ে দাবা খেলছেআচ্ছা, মাংসে কি ঝাল দিব?

বৃষ্টির কথা দুজনের কেউই খেয়াল করল না তারা তাদের মত দাবা খেলতেই থাকল এরপর বৃষ্টি ওদের ধমক দিয়ে বলল, আমার কথা তোমরা শুনতে পাও না ? মাংসে কি ঝাল বেশি দিব ? শফিক মেঘ একসাথেই বলে, হুম

ওদের কান্ড কাড়খানা দেখে আপনমনেই হাসতে থাকে বৃষ্টি
রান্নাঘরে ফিরে এসে বৃষ্টি ভাবতে থাকে এত সুখ ওর সইবে তো ! শফিকের মত স্বামী আর মেঘের মত বন্ধু, এই দুজন এভাবেই সারাজীবন ওর পাশে থাকবে তো ! মেঘের সাথে পাঁচ বছরের বন্ধুত্ব আর শফিকের সাথে সাড়ে চার বছরের প্রেমের শেষে বিবাহিত জীবন, এই নিয়ে ভাবতে ভাবতেই রান্না করতে থাকে বৃষ্টিমেঘটা শুরু থেকেই একটা পাগল ছিল অসম্ভব রকম ছেলেমানুষী আর বাচ্চা বাচ্চা চেহারার কারণে সকলের প্রিয় ছিল ও আর মেঘের হাসি দেখলে তো যেকোন মেয়ে ইন্সট্যান্ট ফিদা হয়ে যেত কত মেয়ের প্রপোজ রিফিউজ করল পাগলটা ! কিছু জিজ্ঞেস করলেই বলত, প্রেম ট্রেম আমার দ্বারা হবে না যখন যা মনে হত তাই করত নিজের ইচ্ছাপূরণের সাথে সাথে অন্যদের ইচ্ছা পূরণ করতেও তার উচ্ছ্বাসের কোন কমতি ছিল না দেখলে মনে হত উনি যেন ইচ্ছাপূরণের দেবতা

   পুরো ক্যাম্পাস জুড়ে বৃষ্টির সর্বক্ষণের সঙ্গী ছিল ওই একজনই, মেঘ ওদের এই বন্ধুত্ব অনেকেই ঈর্ষা করত অবশ্য ঈর্ষা করার মতই ওদের বন্ধুত্ব মেঘের সাথে যখন বৃষ্টির পরিচয় তখন মেঘ ছিল পুরোপুরি আকারে মাদকাসক্ত এক যুবক কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার ছিল এই ছেলেকে দেখে কোনদিনই মনে হয়নি যে এই ছেলে ড্রাগ এডিক্টেড তাই বৃষ্টি যখন বন্ধুদের মুখে শুনল যে মেঘ নেশা করে তখন বৃষ্টি কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারেনি বৃষ্টি বিশ্বাস করেছিল সেদিন যেদিন সে মেঘের কোন খোঁজ না পেয়ে মেঘের ফ্ল্যাটে গিয়েছিল তারপর শুরু হল বৃষ্টির অঘোষিত যুদ্ধ একমাত্র বৃষ্টির চেষ্টাতেই মেঘ এত সহজে নিরাময় কেন্দ্রে না থেকে সব নেশা ছেড়ে দিতে পেরেছিল যেদিন মেঘ পুরোপুরি সুস্থ হল সেদিন বৃষ্টির মনে হল বৃষ্টি যেন মাত্র বিশ্বজয় করে ঘরে ফিরল

তারপর শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য আশ্রম এর জন্য ছোটাছুটি করতে করতে কিভাবে যে ক্যাম্পাস লাইফটা শেষ হয়ে গেল তা দুজনের কেউই বুঝতে পারে না ভার্সিটি পর্বের সমাপ্তি হওয়া মাত্র শফিকের সাথে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হল বৃষ্টি চেয়েছিল একটা জব হলে তারপর বিয়ে করবে কিন্তু দুই ফ্যামিলির চাপে পড়ে মাস্টার্সের সার্টিফিকেট হাতে নিয়ে বেকার হয়েই কাবিননামায় সই করতে হল বৃষ্টিরশফিকের সাথে বৃষ্টির পরিচয়ের কাহিনীটা একটু অন্যরকম বৃষ্টি, মেঘ ওরা তখন সবে মাত্র সেকেন্ড ইয়ারে উঠেছে ভার্সিটির সমাবর্তনের অনুষ্ঠান হচ্ছে মেঘ আসেনি তাই বৃষ্টি একাই করিম ভাইয়ের দোকানে বসে চা খাচ্ছিল চায়ের দোকানে বসেই সমাবর্তনের অনুষ্ঠানের বকবকানি শোনা যাচ্ছিল হঠাৎ করেই বৃষ্টি চা খেতে গিয়ে কাশি দিয়ে উঠল এটা কি শুনছে সে ??? সমাবর্তনের ছাত্র ছাত্রীদের সামনে মেঘ কবিতা আবৃত্তি করছে ??? কোনরকমে করিম ভাইকে চার টাকা ধরিয়ে দিয়ে সমাবর্তনের স্টেজের সামনে গিয়ে তো বৃষ্টি অবাক এ কি ! এত মেঘ না ! কিন্তু আবৃত্তি একদম মেঘের মত ! ঠিক মেঘের মত উচ্চারণ ! আবৃত্তি করা মানুষটার মাঝেও মেঘের মত বাচ্চা বাচ্চা ভাব আছে


এভাবেই মেঘের সাথে মিল খুজতে গিয়ে সদ্য পাশ করে বের হওয়া আইবিএর ছাত্র শফিকের সাথে বৃষ্টির পরিচয়, তারপর প্রেম তারপর আর কি পাশ করার পরপরই বিয়ে তারপর মেঘের বিয়ের গিফট, ঢাকা-মালয়শিয়া-ঢাকা টিকেটে সাত দিনের হানিমুন শেষে আজ সে আর শফিক মেঘের জন্মদিনে মেঘের ফ্ল্যাটে  মেঘের সাথে শফিকের অনেক মিল মেঘের রাগ, জেদ, ক্রোধ, সিগারেট এইসব বাজে দিকগুলো বাদ দিলে দুজন সম্পুর্ণ একই মানুষ বৃষ্টির কাছে সবকিছু স্বপ্নের মত মনে হয় মাঝে মাঝেই বৃষ্টি নিজের গায়ে চিমটি দিয়ে দেখে আসলেই স্বপ্ন না তো !


রান্না শেষ করে তিনজনে মিলে খুব মজা করে বারান্দায় বসে ভোজনপর্ব শেষ করে
তারপর তিনমগ ধোয়া ওঠা গরম কফি নিয়ে গল্প করতে বসে ওরা
শফিক ভাই আজকে আপনাকে আমার জীবনের গল্প শোনাব , বলেই বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে মেঘ বলে, গল্পের মাঝখানে ডিস্টার্ব করলে কিন্তু তোর কপালে খারাপি আছে
নীল শাড়িতে বৃষ্টির হাসিমাখা মুখের দিকে তাকিয়েই চোখ ফিরিয়ে নেয় মেঘ

বৃষ্টি ভাবে কি গল্প বলবে পাগলটা, ওর সব কথাই তো বৃষ্টি জানে পাগলটা শীতের মধ্যে সাদা ফুল হাতা শার্টের সাথে থ্রি কোয়ার্টার পড়ে আছে চুলের সাথে চিরুনির দেখা নাই কতদিন কে জানে ? পাগলটাকে এইসব কে বোঝাবে ? সুন্দর দেখে একটা লাল টুকটুকে বউ এনে দিতে হবে পাগলটাকে সেই লাল টুকটুক বউই ছাগলটাকে একেবারে মানুষ করে ফেলবে


মেঘকে সিগারেট ধরাতে দেখেই চেঁচিয়ে ওঠে বৃষ্টি, ওই তুই সিগারেট ধরাচ্ছিস কেন ?
 মেঘ হেসে বলে, সবই তো ছেড়ে দিয়েছি সিগারেটটা অন্তত থাকুক আমার সাথে ?
এই একটাই আর সিগারেট ধরাতে পারবি না আজ
আচ্ছা বলে সিগারেট ধড়িয়ে গল্প বলা শুরু করে মেঘ,


                              “শফিক ভাই আপনি হয়তো জানেন আমার জন্ম কানাডায় জন্মের পরেই দেখলাম বাবা পাগলের মত টাকার পেছনে ছুটছেন আর মা আমাকে দেশীয় সংস্কৃতির সাথে আত্মার যোগাযোগ ঘটানোর প্রাণান্ত চেষ্টা করছেন ফলাফল হিসেবে আমার শৈশব, কৈশোর শুধু দস্তয়ভস্কি, তলস্তয়, কিটসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকল না, আমার পরিচয়ের ব্যাপ্তি ঘটল রবীন্দ্রনাথ, নজরুল, তারাশঙ্কর, জীবনানন্দ দাস পর্যন্ত সবকিছু ঠিকঠাকমতই চলছিল কিন্তু হঠাৎ করেই মা স্কিন ক্যান্সারে মারা গেলেন তখন আমি ও লেভেল এ পড়ি মা মারা যাবার পর আমি খুব একা হয়ে গেলাম বাবা তো তার ব্যাবসা নিয়েই ব্যস্ত আমি তখন এলকোহল ধরলাম পুরোপুরি এলকোহলিক হয়ে ও লেভেল পরীক্ষা দিলাম একটা সুবিধার দিক ছিল যে আমি নেশা করলেও কেউ বুঝতে পারত না আমি নেশাগ্রস্থ সেইজন্য বাবাও কিছু ধরতে পারলেন না


                বিদেশে আর ভাল লাগল না মনে হল নিজের দেশে ফিরে যাই নিজের আপন ঠিকানায় বাবা মা ছাড়া আমার আর কোন আত্মীয় ছিল না তাই দেশে এসে এই ফ্ল্যাট কিনলাম, গাড়ি কিনলাম একটা বাংলা মিডিয়াম কলেজেই ভর্তি হলাম দেশে এসে দেখলাম এখানে নেশাদ্রব্য বিদেশের চেয়ে অনেক বেশী সহজলভ্য গাঁজা দিয়ে শুরু করে শেষমেষ হেরোইন এ পাকাপোক্ত ভাবে আসক্ত হলাম ক্লাস টাস কিছু করি না পরীক্ষা হলে শুধু গিয়ে পরীক্ষা দেই কেমন করে যেন পাশও করে ফেলি দলবদ্ধ হয়ে নেশা করতে ভাল লাগে না ফ্ল্যাটে বসে একা একাই নেশা করি আর গাড়ি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ি লং ড্রাইভে এমন করতে করতেই এইচএসসি পরীক্ষা যায় পাশ করে কেমন করে যেন একটা পাবলিক ভার্সিটিতেও চান্স পেয়ে যাই


               প্রথম দিন ই নবীণবরণ বড় ভাইদের চাপে পড়ে আবৃত্তি করি জীবনানন্দ দাসের বনলতা সেন স্যার-ম্যাডাম রা খুব প্রশংসা করেন আমার সবাই ভাবল এই ছেলে কিছু একটা হবে প্রথম দিনই অনেকের সাথে পরিচিত হলাম এবং আবৃতি করে মোটামুটি আমি সেলিব্রেটি বনে গেলাম

তারপরের দিন ডিপার্টমেন্টের সামনে দাড়িয়ে মাত্র সিগারেটটা ধরিয়েছি এমন সময় পিছন থেকে মেয়ে কণ্ঠে কেউ একজন আমার নাম ধরে ডাকল আমি পিছনে ফিরেই স্তম্ভিত হয়ে গেলাম, এত সুন্দর কেন মেয়েটা ??? আমি তাকাতেই মেয়েটা আমাকে ইশারায় ডাকল

তোমার কাছে ১০ টাকা ভাংতি আছে ? আমার কাছে ১০০ টাকার নোট

আমি অবাক হয়ে চিরাচরিত উত্তর দিলাম, আমাকে বলছেন ?

হ্যা, তোমাকেই বলছি, ১০ টাকা ভাংতি থাকলে দাও রিকশাওয়ালা কে বিদায় করি
 আর নাহলে এও ১০০ টাকার নোটটা নাও ভাংতি করে দাও
আমি ১০ টাকার নোট বের করে দিয়ে অপলক দৃষ্টিতে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকলাম



                        এভাবেই বৃষ্টির সাথে আমার পরিচয় দুজনের পছন্দের খুব মিল থাকার কারণে অল্প কিছুদিনের মধ্যেই আমরা খুব ভাল ফ্রেন্ড হয়ে গেলাম ছয় সাত মাস পরেই বৃষ্টি আমার অন্ধকার জগতের খবর জেনে গেল এই মেয়েটির জেদের কারণেই আমি দুই মাসের মধ্যেই সব নেশা ছেড়ে দিলাম আসলে আরেকটা নেশা আমাকে ততদিনে গ্রাস করে ফেলেছিল ততদিনে বৃষ্টির মায়ায় আমি প্রচন্ডভাবে আসক্ত গিয়েছিলাম আমার সমস্ত সত্তা জুড়ে তখন কেবলমাত্র একটা মানুষের জন্যই প্রার্থণা উচ্চারিত হত সেটা ভাললাগা না ভালবাসা তখনো বুঝে উঠতে পারিনি ঠিক তখনি শুনলাম আপনার কথা, আপনাদের সম্পর্কের কথা, আমার পুনর্বাসনের সময়টাতে আপনার পরিচয়, ভাললাগা, ভালবাসা সব আমাকে বলল বৃষ্টি কিন্তু কেন যেন ঠিক বিশ্বাস করতে পারলাম না মনে হল বৃষ্টি বোধহয় মজা করছে বিশ্বাস হল সেদিন যেদিন ও আপনার সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল সেদিনই প্রথম বুঝতে পারলাম আমি বৃষ্টিকে ভালবাসি  "
  মেঘের কথার মাঝখানে বৃষ্টি অবাক হয়ে কিছু বলতে নিলে মেঘ বাধা দিয়ে বলে, বৃষ্টি যা কিছু বলার আমার কথা শেষ হবার পরে বলিস
মেঘের চোখের দিকে তাকিয়ে বৃষ্টি আর কিছু বলার পর সাহস পায় না
শুধু অবাক তাকিয়ে থাকে মেঘের দিকে
            মেঘ আবার বলতে শুরু করে, “সেদিনের পর আমি ক্রোধের বশবর্তী হয়ে আপনার সম্পর্কে খোঁজ নেয়া শুরু করলাম আপনার সম্পর্কে খোঁজ নেয়ার পর আমি হতবিহবল হয়ে পড়ি একটা মানুষ এতটা ভাল কিভাবে হয় ? বুঝতে পারলাম বৃষ্টির জীবনে আপনার চেয়ে ভাল জীবনসঙ্গী আর কেউ হতে পারে না আর তাই ভাবলাম সরে যাব বৃষ্টির জীবন থেকে সৃষ্টিকর্তারও বোধহয় তেমনি কোন ইচ্ছা ছিল হঠাৎ করেই বাবা মারা গেলেন আমি এক দিনের নোটিশে কানাডা রওনা হলাম যাবার সময় শুধু ফোন করে বৃষ্টিকে জানিয়ে গেলাম
   বাবা মারা গেলে মানুষ নাকি অথৈ সাগরে পড়ে আমার বাবাও আমাকে অথৈ সাগরে রেখে গেলেন তবে সেটা টাকার অথৈ সাগর বাবার সব ব্যবসার দেখাশোনা করতে গিয়ে বুঝলাম বাবা কি পরিমাণ অমানুষিক পরিশ্রম করে গেছেন সব করে গেছেন আমার জন্যে আমার একটা সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করার জন্যে একমাত্র ছেলেকেও তিনি সময় দিতে পারেন নি বাবার জন্যে খুব কষ্ট হতে লাগল ভাবলাম বৃষ্টি কে ছেড়ে এই কানাডাতেই হোক আমার স্বেচ্ছা নির্বাসন কিন্তু এক মাসও থাকতে পারলাম না সব সম্পত্তি বিক্রি করে দিয়ে বেশুমার টাকা নিয়ে আমি দেশে ফিরলাম
দেশে ফিরে সবার আড়ালেই থাকলাম আবার আমি হেরোইন নেয়া শুরু করলাম দূর থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে বৃষ্টিকে দেখতাম বৃষ্টি তখনও জানে না যে আমি দেশে একদিন হঠাৎ করেই বৃষ্টি আমার ফ্ল্যাটে এসে উপস্থিত আমি হেরোইন সহ আবার ওর কাছে ধরা পড়ি তারপর পুরনো দিনের মত আবার সবকিছু ছেড়ে দেয়া এবং নতুন করে আবার বৃষ্টির মায়ায় আমার আসক্ত হয়ে পড়া সেই একই ঘটনার যেন আবার পুনরাবৃত্তি ঘটল তবে এবার আমি বদলে গেলাম ভবিষ্যতে কি হবে তা না ভেবে বর্তমানের সময়টুকু আর নষ্ট করলাম না আবার ওর সাথে মিশতে শুরু করলাম
                       বাবার রেখে যাওয়া এত টাকা দিয়ে কি করব ? দুজনে মিলে ঠিক করলাম শিশু ও বৃদ্ধদের জন্য একটা আশ্রম খুলব যেই ভাবা সেই কাজ গাজীপুরে জমি কিনলাম আশ্রম এর কাজ শুরু হল প্রতি দিন ক্লাস শেষ করেই গাড়িতে করে গাজীপুর আশ্রমের কাজে চলে যেতাম দুজন আশ্রমের ছোটাছুটি করতে করতে কখন যে মাস্টার্স শেষ হয়ে গেল টেরই পেলাম না পাশ করার পরপরই আপনাদের বিয়ে হয়ে গেল এবং আমি সম্পূর্ণভাবে নিজেকে হারিয়ে ফেললাম
এতদিন যে কাজটা করতে ইচ্ছা করে নি তাই করতে ইচ্ছা করল সিদ্ধান্ত নিলাম আত্মহত্যা করব রেলস্টেশনে গেলাম, বিষ কিনে আনলাম কিন্তু আত্মহত্যা করতে পারলাম না শুধু বারবার মনে হতে লাগল ভালবাসার মানুষটিকে একটিবারের জন্যেও ভালবাসি বলে যেতে পারব না ?
   ভাবলাম যা হবার হবে বৃষ্টিকে আমার ভালবাসার কথা বলতেই হবে
আমি যে বৃষ্টিকে ভালবাসি
   কথা থামিয়ে মেঘ দুজনের দিকেই তাকায়  শফিক, বৃষ্টি দুজনেই একদম চুপ কেউ কোন কথা বলে না
আমি কিন্তু আজ আপনাদের একটা উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে এনেছি আমাদের তিনজনের মধ্যে আজ একজনকে মরতে হবে আমি অথবা শফিক ভাই, দুজনের একজনকে আজ মরতেই হবে কে মারা যাবে সে সিদ্ধান্ত নেবে বৃষ্টি
বৃষ্টি, তুই আজ শুধু একজনকে বাঁচাতে পারবি তোর স্বামী অথবা আমি একজনকে তোর খুন করতেই হবে
তুই ভাল করেই জানিস আমি যা বলি তা করেই ছাড়ি
পকেট থেকে লাইসেন্স করা রিভলবারটা বৃষ্টির হাতে তুলে দেয় মেঘ
বৃষ্টি বিকারগ্রস্থের মত রিভলবারটা হাতে নেয় রিভলবারটা হাতে নিয়ে বেশ কিছুক্ষন বসে থাকে বৃষ্টি তারপর শফিকের দিকে তাকিয়ে বলে, মাফ করে দিও
                ঘটনার আকস্মিকতায় কি করা উচিত বুঝতে পারে না শফিক মেঘের দিকে রিভলবারটা তুলে ধরে বৃষ্টি তুই কখনও বলিস নি আমাকে তুইও তো কখনও বুঝিস নি আমাকে বৃষ্টি কাঁদতে থাকে কাঁদতে কাঁদতে রিভলবারটা নিজের মাথার দিকে ধরে ট্রিগার টিপে দেয় শফিক যেন এই দৃশ্য দেখে পাথর হয়ে যায় গুলির শব্দ হবার সাথে সাথেই অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে মেঘ, আরে বাবা তোদের সাথে একটু মজা করলাম রিভলবারে গুলি নাই শুধু মেঘই হাসতে থাকে ঘটনার আকস্মিকতায় সময় যেন থমকে যায় মেঘ হাসতেই থাকে বৃষ্টি উঠে গিয়ে মেঘের গালে জোরে একটা থাপ্পর মেরে ফ্ল্যাট থেকে বেড়িয়ে যায় শফিক কি করবে বুঝতে না পেরে বৃষ্টির পেছন পেছন ছুটে যায় কাঁদতে কাঁদতে সিঁড়ি দিয়ে নামার সময় গুলির শব্দে থমকে দাড়ায় বৃষ্টি
              শফিকের দিকে একবার তাকিয়ে ফ্ল্যাটের দিকে ছুটে যায় বৃষ্টি শফিক ভিতরে গিয়ে দেখে মেঘের মাথা থেকে রক্ত বের হয়ে ভেসে গেছে মেঝে তার উপর অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে বৃষ্টি বৃষ্টির হাতে ছোট্ট একটা চিরকুট
বৃষ্টি,
তোকে সত্যিই অনেক ভালবাসি
অনেক বেশি ভালবাসি
আকাশের মেঘ যেমন অল্প কিছু সময়ের জন্য বৃষ্টিকে ধরে রাখে
তেমনি কিছুটা সময় আমি তোকে ধরে রেখেছিলাম
তোকে ধরেই বেঁচে ছিলাম
মেঘ থেকে বৃষ্টি ঝরে গেলে যেমন মেঘ বাতাসে মিলিয়ে যায়
তেমনি আমিও আজ মিলিয়ে গেলাম
ভালো থাকিস
পরিশিষ্টঃ দুইবছর মানসিক হাসপাতালে থাকার পর শফিকের ভালবাসায় বৃষ্টি আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসে ওদের ঘর আলো করে জন্ম নেয় ফুটফুটে একটি ছেলেসন্তান বৃষ্টি ওর ছেলের নাম রাখে -মেঘ

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন